শেখ আবু তালেব: অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে এবার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের শত শত কোটি টাকার বৈশাখী উৎসবের পণ্য অবিক্রিত থেকে গেল। মজুদ পণ্য অন্য সময়ে যে বিক্রি হবে তার সম্ভাবনাও নেই। ফলে বৈশাখী এসব পণ্য তৈরিতে বিনিয়োগের পুরোটাই লোকসান গুনতে হবে উদ্যোক্তাদের।
### শত কোটি টাকার পণ্য অবিক্রিত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত ১লা বৈশাখের পণ্য তৈরি করা হয় ফেব্রুয়ারির শেষ থেকেই। ২১ শে ফেব্রুয়ারির ভাষা ও শহীদ দিবস সামনে রেখে তৈরি পণ্য বিক্রির পরই মনোযোগ দেয়া হয় বৈশাখী পণ্যের। আমাদের দেশে গত আট মার্চ করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) শনাক্ত হয় প্রথম।
কিন্তু এই সময়ে বৈশাখ ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে পণ্য তৈরি হতে থাকে। গত ২৬ মার্চ না আসতেই অর্থনীতিতে করোনার ছাপ ফুটে উঠা দৃশ্যমান হয়। এই সময়ে পণ্য তৈরির কাজ থামিয়ে দেন সবাই। কিন্তু এর পূর্বেই সিংহভাগ পণ্য তৈরি হয়ে গিয়েছে।
জানা গেছে, সারা দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের (এসএমই) তৈরিকৃত পণ্যের উৎসবমুখর অর্থনীতির বাজার হচ্ছে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। দুই ঈদ, পূজা, জাতীয় দিবস ও বৈশাখকে ঘিরে এই বাজার। ঈদ ছাড়া উৎসবকেন্দ্রীক অর্থনীতির প্রধান বাজারই হচ্ছে এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর।
স্বল্প সময়ের জন্য ব্যবহার উপযোগী পোশাকই বৈশাখের মূল আকর্ষণ। খরচে সাশ্রয়ী, রঙ-বেরঙ ও নানা নকশার কারুকার্য খচিত বৈচিত্রময় পোশাকগুলো এসএমই উদ্যোক্তাদের হাতেই তৈরি হয়। এসব কাজে মূলত গৃহিনী থেকে শুরু করে নতুন উদ্যোক্তা ও ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন। বেশি মুনাফার চেয়ে নিজেদের উদ্ভাবনী ও সৃজনশীলতার প্রচারেই বেশি মনোযোগ থাকে তাদের। এজন্য তুলনামূলক কম মূল্যেই পাওয়া যায় এসব পণ্য।
বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আড়ং, দর্জিবাড়ি, দেশী দশ, সুই সূতা কিছু পণ্য তৈরি করে গ্রাহক ধরে রাখতে। কিন্তু উৎসবের মূল বাজারের নিয়ন্ত্রণ এসএমইদের হাতেই থাকে।
১লা বৈশাখে অর্থনীতির বাজার কতোটুকু এ সংক্রান্ত কোনো জরিপ বা তথ্য পাওয়া যায়নি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছেই।
তবে জাতীয় এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে সিএমএসএমই উদ্যোক্তার সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ৭৮ লাখ। এসএমই ফাউন্ডেশনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোর্শেদ আলম শেয়ার বিজকে বলেন, এসএসই প্রতিষ্ঠানগুলোই মূলত উৎসবকেন্দ্রীক পণ্য বেশি তৈরি করে থাকে। সারাদেশে এর বাজার আনুমানিক আট হাজার কোটি টাকার মতো। শহর ও গ্রামকেন্দ্রীক হওয়ায় এ নিয়ে সঠিক কোনো তথ্য এখনো তৈরি হয়নি। এটি নিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশন কাজ করছে।
জানা গেছে, ১লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে প্রায় এক কোটি টাকার পণ্য তৈরি করেছিল নিপূণ নামের এক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব পণ্যর প্রায় পুরোটাই অবিক্রিত থেকে গেছে তাদের। পরবর্তীতে এসব পণ্যর চাহিদা ও বাজার থাকবে না।
এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) এর তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে বিসিক শিল্পনগরীতে এসএমই খাতে শ্রমিক কর্মচারী মিলিয়ে আট হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর বাইরে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সব মিলিয়ে ২৫ লাখের বেশি লোকের কর্মসংস্থান এ খাতের।
নাসিব প্রেসিডেন্ট মির্জা নুরুল গনি শোভন বলেছেন, মৌসুমভিত্তিক তৈরি পণ্য অন্য সময়ে বিক্রি হয় না। ঢাকা শহরেই একশতের বেশি এসএমই প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের প্রত্যেকেরই ৫০ লাখ থেকে শুরু করে এক কোটি টাকার পণ্য মজুদ রয়েছে। এভাবে শত শত কোটি টাকার পণ্য এবার বিক্রি হল না। এসব প্রতিষ্ঠান মূলত চলে ব্যক্তিগত মূলধন দিয়ে। ব্যাংক ঋণ খুবই কম। এবছর লোকসান হওয়ায় অনেক উদ্যোক্তাই ব্যবসায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। ঋণী হয়ে যাবেন অনেকেই। অনেক কারিগরের মজুরি বকেয়া হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্ষুদ্র এসব উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র। অন্তত উৎপাদন মূল্যে তাদের কাছ থেকে পণ্য নেয়া যায়। যা উপহার হিসেবে দিতে পারেন তারা। এতে অন্তত উদ্যোক্তাদের মূলধন সাশ্রয় হতো। আগামী কোনো উৎসবে পণ্য তৈরি করতে পারতো।