নিয়াজ মাহমুদঃ কৌশলগত বিনিয়োগকারী (স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার) হতে দেশি-বিদেশি ৯ প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করলেও এখন পর্যন্ত প্রাথমিক চুক্তি করতে পারেনি দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এ কারণে গতকাল বুধবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে সময় বাড়ানোর আবেদন করবে ডিএসই। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) গত সোমবার ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের স্টক এক্সচেঞ্জ ডি-মিউচুয়ালাইজেশন (মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথককরণ) আইনে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে স্টক এক্সচেঞ্জের সংরক্ষিত ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বাধ্যবাধকতা ছিল। আইনুযায়ী এক বছরের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রির সময় বেঁধে দেয় বিএসইসি। চলতি মাসের ১২ তারিখ এক বছর সময় শেষ হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সঙ্গে শেয়ার বিক্রির চুক্তি না হলে কমিশন সময় বাড়াতে পারবে। তবে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে স্টক এক্সচেঞ্জের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে হবে।
এ প্রসঙ্গে গতকাল বুধবার কথা হয় ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেএএম মাজেদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্ধারণ করা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে সময় চাওয়া হবে।’
‘আজ (বৃহস্পতিবার) পুরো প্রক্রিয়ার অগ্রগতি বিএসইসিকে অবহিত করে সময় বাড়ানোর আবেদন করা হবে’ বলে জানান তিনি।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে তিন দফায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেছে ৯টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান। খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম প্রধান পুঁজিবাজার নাসডাক, বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), কমনওয়েলথ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (সিডিসি), সুইডেনভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্রামার্স অ্যান্ড পার্টনার্স, জার্মানিভিত্তিক কেএফডব্লিউ, হংকংভিত্তিক কিংসওয়ে ক্যাপিটাল, ওয়াটারহাউস কুপার্স, আইআইডিএফসি ও দেশি প্রতিষ্ঠান স্কয়ার।
ডি-মিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য বা ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান, ৩৫ শতাংশ শেয়ার আইপিও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করতে হবে। আর বাকি ২৫ শতাংশ কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৮ অক্টোর কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিতে আগ্রহপত্র আহ্বান করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। আগ্রহপত্রে বলা হয়, কৌশলগত বিনিয়োগকারী থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদিত দেশি বা বিদেশি কোনো স্টক এক্সচেঞ্জ, খ্যাতনামা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আবেদন করতে পারবে। উন্নততর প্রযুক্তি সুবিধা, ব্যবস্থাপনাগত ও ব্যবসা উন্নয়নে পরামর্শক সেবা পাওয়াই কৌশলগত বিনিয়োগকারী নেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য। আগ্রহীদের ১৫ নভেম্বরের মধ্যে খামবন্ধ আগ্রহপত্র জমা দিতে বলা হয়।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘বাজার দিন দিন উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তাই ডিএসইর শেয়ারে বেশি দাম পাওয়া যাবে। এ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হওয়ার জন্য অনেকে এখন আগ্রহ দেখাচ্ছে।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর এক পরিচালক জানান, ডিএসইর আয়-ব্যয়ের যে অবস্থা, তাতে করে খুব একটা বেশি দাম পাওয়া যাবে না। সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ টাকা পাওয়া যেতে পারে। এতে করে বর্তমানে শেয়ার বিক্রি করতে গেলে স্টেকহোল্ডারদের লোকসান গুনতে হবে। তাই ডিএসইর শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না।
ডিএসইর আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে প্রতিটি শেয়ারে সম্পদ (এনএভিপিএস) মূল্য দাঁড়ায় ১১ টাকা ৬৮ পয়সা। এ অর্থবছরে কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ারে আয়
(ইপিএস) করে ৭৫ পয়সা। আর সর্বশেষ অর্থবছর (২০১৫-১৬) শেষে ইপিএস আরও কমেছে। এ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানাটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৭০ পয়সার মতো। এতে করে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিটি
শেয়ারে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ টাকা পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই দামে শেয়ার বিক্রি করলে বড় ধরনের লোকসান হবে স্টেকহোল্ডারদের। কারণ বর্তমানে ডিএসইর পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ এক হাজার ৮০৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এর বিপরীতে শেয়ার রয়েছে ১৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০টি। আর এই শেয়ারের মালিকানায়
আছেন ২৫০ জন। এ হিসাবে প্রত্যেক স্টেকহোল্ডার (শেয়ার মালিক) ৭২ লাখ ১৫ হাজার ১০৬টি করে শেয়ার পাবেন।