নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি দেশের তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী আকিজ টোব্যাকো কোম্পানিকে ১২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা দিয়ে জাপান টোব্যাকো ইনকরপোরেশন কিনে নিয়েছে। কিন্তু এ ধরনের কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। একটি ভালো মানের বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার এদেশে দীর্ঘদিন ব্যবসা করছে কিন্তু পুঁজিবাজারে আসছে না এ ব্যর্থতা কার? এ জন্য সরকার কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। বিএসইসির দায়িত্ব হচ্ছে একটি স্বচ্ছ ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। যারা কারসাজি করছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা। অর্থাৎ স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম যে হারে বাড়ছে, নিশ্চয়ই এতে কোনো কারসাজি রয়েছে। এ কারসাজি ধরতে না পারা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতা। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়গুলো আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী এবং ডিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. সবুর খান।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন গত তিন-চার মাসের মধ্যে সূচক প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ পয়েন্টের মতো কমেছে। এতে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে বড় বিষয় হচ্ছে, মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দাম যেভাবে বাড়ার কথা সেভাবে বাড়ছে না। অপরদিকে স্বল্প মূলধনি কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দাম দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে এ কয়েক মাসে। এতে মনে হয় পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক যে ট্রেডিংয়ের নিয়ম রয়েছে সেটি মানা হচ্ছে না। বিএসইসির দায়িত্ব হচ্ছে একটি স্বচ্ছ ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। যারা কারসাজি করছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা। অর্থাৎ স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দাম যে হারে বাড়ছে নিশ্চয়ই এতে কোনো কারসাজি রয়েছে। এ কারসাজি ধরতে না পারা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতা।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে একটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে দীর্ঘসময় লাগে। কিন্ত যে কোনো কোম্পানি ব্যাংক থেকে অতি সহজেই ঋণ নিতে পারছে। বর্তমানে ৯৫ শতাংশ বিনিয়োগে অর্থায়ন করা হচ্ছে মানি মার্কেট থেকে। আর পুঁজিবাজার থেকে মাত্র পাঁচ শতাংশ অর্থায়ন করা হয়েছে গত কয়েক বছরে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কয়েক বছর ধরে ২২ থেকে ২৩ শতাংশে আটকে আছে। তার মানে বিনিয়োগ করার জন্য অর্থের চাহিদা বাড়ছে না। ফলে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যাংক থেকেই সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্ত অর্থনীতির দৃষ্টিতে যখন বিনিয়োগ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে তখন পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিতে বাধ্য হবে কোম্পানিগুলো। তখনই একটি দেশের অর্থনীতির গতি ত্বরান্বিত হবে এবং টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ব্যাংক খাতে সমস্যার মূল কারণ সুশাসনের অভাব। এটি ব্যাংক খাতে নেই বললেই চলে। ঋণখেলাপির পরিমাণ বেড়ে গেছে। এতে পুঁজিবাজার এবং অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
মো. সবুর খান বলেনÑআমাদের পুঁজিবাজারকে আরও সম্প্রসারণ করতে হবে। বিশ্বের উন্নত পুঁজিবাজারের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তারা পুঁজিবাজারকে সম্প্রসারণ করার জন্য ডাইভারসিফাই, নতুন নতুন ইকুইটি, বন্ড, অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট প্রভৃতি উপাদান অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্ত আমাদের পুঁজিবাজার ঘুরেফিরে একই বৃত্তের মধ্যেই আটকে আছে। আমাদের পার্শ^বর্তী ভারত, হংকং, সিঙ্গাপুর এমনকি আমেরিকায় প্রতিদিন বাজার নিয়ে কিছু না কিছু পরিকল্পনা থাকে। কোন ধরনের কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসছে, কী ধরনের অফার রয়েছে, এসব বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করে। আমরা পুঁজিবাজারে কোন কোম্পানির শেয়ারের মূল্য কী পরিমাণ বাড়ছে বা কমছে তার পেছনে যে পরিমাণ সময় দিচ্ছি অথচ ওই কোম্পানির মূল্য কতটুকু? কি পরিমাণ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে? দেশি ও বিদেশি মার্কেটে তার গুরুত্ব কতটুকু এবং শেয়ার হোল্ডারদের জন্য কী পরিমাণ সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে এসব সম্প্রতি দেশের তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আকিজ টোব্যাকো কোম্পানিকে ১২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা দিয়ে জাপান টোব্যাকো ইনকরপোরেশন কিনে নিয়েছে। কিন্ত এ ধরনের কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। একটি ভালো মানের বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার এদেশে দীর্ঘদিন ব্যবসা করছে কিন্তু পুঁজিবাজারে আসছে না এ ব্যর্থতা কার? এ জন্য সরকার কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না।