রুবাইয়াত রিক্তা : পুঁজিবাজারে চলছে টানা মন্দা। চলতি মাসে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সাত দিনই মন্দা ছিল। বাকি তিন দিন সামান্য বেড়েছে সূচক। এপ্রিলে টানা পতনের পর শেষদিকে তিন দিন বেড়েছিল সূচক। মে মাসে আবার টানা পতন চলছে। বিনিয়োগকারীদের পুঁজি আটকে যাওয়ায় তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। চাইলেও বাজার থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। বিশেষ করে নতুন বিনিয়োগকারীদের অবস্থা আরও নাজুক। তারা এসেই ফেঁসে গেছেন। নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খোলা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। স্থিতিশীল বাজারের জন্য নতুন কোম্পানির পাশাপাশি দরকার নতুন নতুন বিনিয়োগকারী। কিন্তু বর্তমান বাজারে নতুন বিনিয়োগকারী আসা তো দূরে থাক, পুরোনোরাই হাত গুটিয়ে বসে আছেন। তাই বাজারে সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেন। এপ্রিলের শুরুর দিকে যে বাজার মূলধন ছিল, তার থেকে বর্তমানে কমে গেছে ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। লেনদেন হাজার কোটির ঘর থেকে ৫০০ কোটির ঘরে নেমে এসেছে।
গতকাল লেনদেনের শুরুটা ভালোই ছিল। সকাল সাড়ে ১১টায় সূচক ৩০ পয়েন্ট বেড়েছিল। ব্যাংক, আর্থিক খাতসহ বেশিরভাগ খাতের দর ইতিবাচক ধারায় ছিল। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূচকের পতন শুরু হয়। দুপুর ১টার দিকে সূচক পাঁচ পয়েন্ট নেতিবাচক ছিল। শেষদিকে ধীরে ধীরে ইতিবাচক ধারায় ফেরে। দিনশেষে সূচক সাত পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ৪৩৫ পয়েন্টে দাঁড়ায়। গতকাল ১৪২ কোম্পানির দর বেড়েছে, কমেছে ১৩৫টির; অপরিবর্তিত ছিল ৪৭টির দর। ব্যাংকিং খাত ছিল মন্দের ভালো। দর বাড়ার শীর্ষে ছিল সিটি ব্যাংক। শেয়ারটির দর এক টাকা ৩০ পয়সা বেড়ে ৩৩ টাকা ৩০ পয়সা হয়েছে। আর্থিক খাতেও ছিল পতনের ধারা। এ খাতে দর কমার শীর্ষে ছিল ডিবিএইচ। শেয়ারটির দর কমেছে তিন টাকা। আইসিবি এক টাকা ৬০ পয়সা, আইপিডিসি এক টাকা এবং লংকাবাংলা ৮০ পয়সা দর হারায়। সূচকের উত্থানে ইউনাইটেড পাওয়ার প্রায় চার পয়েন্ট, সিটি ব্যাংক দুই পয়েন্ট, ডরিন পাওয়ার এক পয়েন্ট ভূমিকা রেখেছে। আর সূচক পতনের নেপথ্যে ছিল জিপি, আইসিবি ও বেক্সিমকো ফার্মা।
গতকাল মোট লেনদেনের ১৬ শতাংশ বস্ত্র খাতে, ১৪ শতাংশ ব্যাংকে, ১৩ শতাংশ করে জ্বালানি ও আর্থিক খাতে এবং ১০ শতাংশ লেনদেন হয় ওষুধ ও রসায়ন খাতে। আগের দিনের তুলনায় জ্বালানি খাতে লেনদেন বেড়েছে এক দশমিক ১০ শতাংশ, বস্ত্র খাতে দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ব্যাংক খাতে দশমিক ৫৪ শতাংশ।
পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা মোটেই প্রত্যাশিত নয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে। না হলে পলিসি সুবিধা দিতে হবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য। তা না হলে বাজার ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে। আর দ্রুত ঘুরে না দাঁড়ালে বিনিয়োগকারীরা ধৈর্য হারিয়ে বাজার থেকে সরে পড়বেন। একবার আস্থাহীনতা তৈরি হলে বাজারকে গতিশীল করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই বাজার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের এদিকে নজর দেওয়া জরুরি।
Add Comment