জাকারিয়া পলাশ: যে কোনো শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জমি অনুৎপাদনশীলভাবে পড়ে থাকলে তা অধিগ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা)। শিল্প এলাকার ভেতরে ও বাইরের যে কোনো অলস জমিই অধিগ্রহণ করতে পারবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এ সংস্থা।
সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। অব্যবহৃত জমি ছাড়াও শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও হস্তান্তরের সুযোগ থাকছে নীতিমালায়। জনস্বার্থে শিল্প স্থাপন ও সম্প্রসারণের কাজে এসব সম্পত্তি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে এতে।
সূত্রমতে, বিডার পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে তা সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ নীতিমালার বিষয়ে মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে। ওই খসড়া নীতিমালাকে ‘সরকারি শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও তার অব্যবহৃত জমি বা স্থাপনা বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের জন্য ব্যবহার সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৬’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রণীত ‘বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন’কে ভিত্তি করে এ নীতিমালা করা হয়েছে।
নীতিমালা অনুসারে বিভিন্ন সরকারি শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং তার অব্যবহƒত জমি চিহ্নিত করে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হবে। এ তালিকা করার জন্য সরকারিভাবে একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির তৈরি করা সে তালিকা ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র অনুমোদনের পরই তা অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ওইসব জমি বা প্রতিষ্ঠানের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতাও থাকবে বিডার কাছে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, স্বাধীন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের পরামর্শ অনুযায়ী অধিগ্রহণযোগ্য ওইসব সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ করবে কর্তৃপক্ষ। সম্পত্তির মূল্য ১০০ কোটি টাকার কম হলে তা বিনিয়োগের জন্য অধিগ্রহণের সুযোগ পাবে বিডা। আর মূল্য ১০০ কোটি টাকার বেশি হলে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হবে। তবে অধিগ্রহণ করা জমির ওপর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা উপাসনালয় থাকলে তার অবস্থান অপরিবর্তিত রাখার কথা বলা হয়েছে বিধিমালায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিডার নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নীতিমালাটি বিডা আইনের ভিত্তিতেই করা হয়েছে। বিডা আইন অনুসারে সরকারের বিভিন্ন রুগ্নশিল্প, তাদের সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। আগে এ কাজ করতো বেসরকারিকরণ কমিশন। এখন বেসরকারিকরণ কমিশন আর বিনিয়োগ বোর্ড সমন্বিত হয়ে বিডা গঠিত হয়েছে। সে হিসেবে বিডার কাজেরই অংশ হচ্ছে ওইসব সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে তা বিনিয়োগের উপযোগী করা।’
ওইসব অব্যবহৃত সম্পত্তি অধিকতর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের লক্ষ্যে এ নীতিমালা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে বলা হয়, সম্পদের প্রকৃতি অনুযায়ী অধিগ্রহণ করা সম্পত্তির মধ্য থেকে জমি, স্থাপনা ও মেশিনারির পৃথক তালিকা করার পর তা বিভিন্ন প্লটে বিভক্ত করা হবে। ওইসব প্লটের সমন্বয়ে বিডার অধীনে একটি ‘ল্যান্ড ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠিত হবে। ওই ল্যান্ড ব্যাংক থেকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লিজ দেওয়া হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ক্লাস্টারভিত্তিক শিল্পপার্ক তৈরি এবং বিশেষায়িত শিল্প স্থাপনের জন্য উদ্যোক্তারা ওই ল্যান্ড ব্যাংক থেকে ভূমি লিজ পাবেন। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা (পিপিপি) ও দেশি-বিদেশি আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সেখানে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। ল্যান্ড ব্যাংকের জমির একাধিক প্রার্থী থাকলে উম্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে তার লিজিং হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। অধিগ্রহণ করা অন্যান্য শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকেও (জমি ব্যতীত) দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর কাছে বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়।
জমি ও প্রতিষ্ঠানের মূল্য পরিশোধ সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, বরাদ্দপ্রাপ্ত বিনিয়োগকারী তিন বছরের কিস্তিতে মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। তবে বরাদ্দের আগেই ৩০ শতাংশ মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এক মাসের মধ্যে কেউ পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করলে তাকে ১০ শতাংশ রেয়াত দেওয়া হবে। তবে জমি বা প্রতিষ্ঠানের অতীতের কোনো দায়দেনা অধিগ্রহণের পর নতুন বিনিয়োগকারীকে বহন করতে হবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়। ওইসব দায়দেনা সরকারই বহন করবে। তবে বরাদ্দ পাওয়ার পর বিনিয়োগকারী নির্ধারিত সময়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে ব্যর্থ হলে ওই বরাদ্দ বাতিল করতে পারবে বিডা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মতামত এলে তা সমন্বয় করে এ-সংক্রান্ত সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হতে পারে বলে বিডা সূত্রে জানা গেছে।
Add Comment