নীতিমালা প্রকাশে সময় চায় আরও তিন মাস

আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারকে গতিশীল ও প্রাণবন্ত করার লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ বিধিমালা ১৯৯৫-এর পরিবর্তে সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ বিধিমালা ২০২২ প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে উল্লেখযোগ্য তথ্য এবং মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ নীতিমালা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে নীতিমালা কোম্পানির নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি ব্যাপক এবং সময়সাপেক্ষ বলে দাবি করেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি)। এজন্য সংগঠনটি কোম্পানিগুলোর পক্ষে আরও তিন মাস সময় চেয়ে কমিশনের কাছে আবেদন করেছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি চিঠি বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বরাবর পাঠিয়েছে সংগঠনটি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ) বিধিমালা ২০২২-এর বিধি ৩-এর

উপ-বিধি ২ মোতাবেক তালিকাভুক্ত কোম্পানি বা ফান্ড বা সিকিউরিটিজের ইস্যুয়ার বা ফান্ডের ব্যবস্থাপক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বা ট্রাস্টিকে অত্র ধারার উপ-বিধি (১)-এর তথ্যসমূহের মূল্য সংবেদনশীলতা বিবেচনা করিবার ক্ষেত্রে তফসিল-ক অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কোম্পানিগুলো আলোচ্য বিধি অনুসরণ করে উল্লেখযোগ্য তথ্য এবং মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ নীতিমালা প্রস্তুত করবে। সেই সঙ্গে সরকারি গেজেট প্রকাশিত হওয়ার তারিখ থেকে ৩ মাসের মধ্যে উক্ত নীতিমালা প্রকাশ করার বিধান আছে। সে মোতাবেক উল্লেখযোগ্য তথ্য এবং মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ নীতিমালা প্রস্তুত এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশের শেষ তারিখ আগামী ৩০ এপ্রিল।

এর আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ আলোচ্য বিধিমালার ওপর গত ৬ এপ্রিল স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। যেহেতু প্রণীত বিধিমালাটি সম্পূর্ণ নতুনভাবে জারি করা হয়েছে, সেহেতু তফসিল-ক অনুসরণ পূর্বক উল্লেখযোগ্য তথ্য এবং মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ নীতিমালা প্রস্তুতকরণ একটি ব্যাপক এবং সময়সাপেক্ষ। উক্ত নীতিমালা প্রণয়নের জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন।

তাই উল্লেখযোগ্য তথ্য এবং মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ নীতিমালা প্রণয়নের জন্য আরও তিন মাস সময় বাড়ানোর জন্য অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কমিশনের আছে আবেদন জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে অ্যাসোসিয়েশনের সচিব মো. আমজাদ হোসেনকে শেয়ার বিজ থেকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করা হলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো উত্তর দেননি।

এর আগে পুঁজিবাজারে বেআইনিভাবে সম্পদ উপার্জন করেছে, তদন্তে এমন কিছু প্রমাণ হলে তা বিচারিক প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্তের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। একইভাবে পুঁজিবাজারে প্রতারক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কিংবা সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী এককভাবে অথবা সম্মিলিতভাবে কোনো কারসাজি বা প্রতারণার কারণে যেসব বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তারা এর দ্বারা সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতির দ্বিগুণ অর্থ পাবেন। এ বিধান রাখা হয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ২০২২ নীতিমালায়।

বর্তমানে একই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এবং দ্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ কার্যকর রয়েছে। তবে এ আইন ও অর্ডিন্যান্সের কোনোটিতে সম্পদ বাজেয়াপ্তের বিধান নেই।

এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের দ্বিগুণ আর্থিক সুবিধা দেয়ার কোনো রেওয়াজও ছিল না। নতুন আইনে শুধু সম্পদ বাজেয়াপ্তের ক্ষমতাই রাখা হয়নি। শান্তির দণ্ডও দ্বিগুণ করা হয়েছে। কমিশন আইন ১৯৯৩-এ শাস্তির বিধান ছিল ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। নতুন আইনে তা বাড়িয়ে ১০ বছর এবং ১০ লাখ টাকা অথবা উভয় দণ্ড আরোপ করা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ২০২২-এ শুধু কমিশনের ক্ষমতা, কাজের পরিধিই বৃদ্ধি ঘটানো হয়েছে। সঙ্গে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগে যোগ্যতার মানদণ্ডও কড়াকড়ি হয়েছে। আগের আইন ও অর্ডিন্যান্সের সঙ্গে নতুন প্রণীত আইন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ২০২২ অনেকটা পুঁজিবাজারবান্ধব। এতে বাড়ানো হয়েছে কমিশনের কাজের আওতা। নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতাও বেড়েছে বহুগুণ। শাস্তির বিধান হয়েছে দ্বিগুণ। তবে নতুন এই আইনেও থাকছে আগের সব কিছুই। এখানে আরও স্পষ্ট করা হয়েছে। পাশাপাশি সময়ের বাস্তবতার আলোকে প্রয়োজনীয় বিধি-বিধানও সংযুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে নতুন আইনে চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে যোগ্যতার মানদণ্ড কড়াকড়ি করা হলেও বাড়ানো হয়েছে কমিশনে নিযুক্তদের ক্ষমতা ও সম্মান। অর্থাৎ কমিশনের চেয়ারম্যানকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা দেয়া হয়েছে। কমিশনাররা ভোগ করবেন সচিবের মর্যাদা, যা আগের আইনে ছিল না।

জানা গেছে, গত ৫ মার্চ আইনটির পূর্ণাঙ্গ খসড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। অংশীজনদের কাছ থেকে পাওয়া মতামত ইতিবাচক গ্রহণযোগ্য হলে তা চূড়ান্ত খসড়ায় সংযুক্ত করা হবে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ২০২২-এর সূচনা পর্বে বলা হয়, সিকিউরিটিতে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সংরক্ষণ, সিকিউরিটিজ মার্কেট ও ইস্যুর নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন, লেনদেন এবং এ-সংক্রান্ত বিষয়াবলি বা আনুষঙ্গিক বিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এ আইন তৈরি করা হয়েছে। আইনটি গেজেট আকারে কার্যকরের দিন থেকে আগের সব আইন ও অর্ডিন্যান্সে বাতিল হবে। ৩১ পৃষ্ঠার নতুন এই খসড়া আইনে ১১টি অধ্যায়ে ৬৬টি ধারা এবং দেড় শতাধিক উপধারা রয়েছে। এতে পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শৃঙ্খলায় রাখার নিয়ম-কানুন, বিধি-নিষেধ, কমিশনের আওতাধীন কার্যাবলি, পরিস্থিতি বুঝে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়াসহ দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর দণ্ড আরোপ ও কার্যকরের ক্ষমতা সুস্পষ্ট করা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০