প্রতিনিধি, নীলফামারী: নীলফামারীতে গতকাল শুক্রবার সকালে খুচরা বাজারে ২০০-২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ওই মরিচ খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়।
জেলা শহরের কিচেন মার্কেটসহ বিভিন্ন ছোট ছোট মোড় বা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি প্রতিকেজি ১৬০ টাকায় কিনে খুচরা বাজারে ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি করছে দোকানদাররা। এক দিনের ব্যবধানে প্রতিকেজিতে ৪০-৬০ টাকা লাভ করছে তারা।
এ ব্যাপারে কিচেন মার্কেটের সিহাব ভাণ্ডারের মালিক ও আড়তদার মো. নুর আমিন বলেন, ‘আজকে রংপুর ও দিনাজপুরের মার্কেট ছিল ২২০ টাকা কেজি। তাও মরিচ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আমি পাইকারি ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুচরা ব্যবসায়ীরা কত করে বিক্রি করেন, তা সঠিক বলতে পারব না।’
এদিকে পুঁইশাক, পাটশাক, কচুশাক, কলমিশাক ও ধোনেপাতা আঁটিতে বেড়েছে ১০ টাকা। চিচিঙ্গা, বরবটি, আদা, হলুদ, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচা সবজির মূল্য তড়তড় করে বেড়েই চলছে। সবচেয়ে দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচ ও শুকনা মরিচের। এ যেন সোনার হরিণ।
শহরের উকিলের মোড়ের খুচরা বাজারে শুকনা মরিচের পাইকারি বাজার প্রকারভেদে ৪০০ টাকা আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫২০ টাকা কেজি দরে। প্রয়োজনে কিনতে বাধ্য হচ্ছে ভোক্তারা।
ওই মোড়ে কথা হয় রিকশাচালক ও আলু কিনতে আসা ক্রেতা মতিয়ার রহমান (৪২) জানান, ‘রিকশা চালিয়ে কোনোদিন আয় হয় কোনোদিন হয় না। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে এমনিতেই যাত্রী কম। তাই আয়ও কম।’ তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে এক কেজি আলু কিনেছিলাম ৪৫ টাকায়, আজকে সেই আলু ৫০-৫৫ টাকা চাচ্ছে। বাজার ঘুরে ঘুরে বাধ্য হয়ে ৫০ টাকায় এক কেজি আলু কিনলাম, কিন্ত মরিচ ছাড়া তো ভর্তাও খাওয়া যাবে না, ভাই। বাধ্য হয়ে ২২০ টাকা কেজি দরে এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) ৫৫ টাকায় কিনলাম। যাদের ইনকাম আছে, যারা চাকরি করে, বাজার নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। মরণ আমাদের মতো ভ্যানচালক ও রিকশাচালকদের। এসব দেখার কেউ নেই।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৫৭৫ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের চাষ হয়েছে। আমাদের হিসাবে গ্রামেগঞ্জে প্রচুর মরিচের চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষে কৃষকদের অনেক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাদের ভালো ফলনও হয়েছে। তারপরেও বর্ষার অজুহাতে কাঁচা বাজার অস্থির।
কিচেন মার্কেটের আড়তদার আনোয়ার হোসেন জানান, আজকে পাইকারি প্রতিকেজি মরিচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। তবে শুনছি, খুচরা বাজারে নাকি ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, জেলার ডোমার উপজেলায় কাঁচা মরিচের সবচেয়ে বড় হাট বসুনিয়ার হাট। সেখানে হাজার হাজার মণ মরিচ আমদানি-রপ্তানি হয়। সেখানেও মরিচের আমদানি নেই। ফলন কমে যাওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।
নীলফামারী কিচেন মার্কেটের খুচরা দোকানদার ইলিয়াস হোসেন জানান, ‘এ শহরে হাতে গোনা দু-চারটা আড়তদার। আবার খুচরা পাইকার সংখ্যায় বেশি। মরিচ আসা মাত্রই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঘিরে ধরে। আর বস্তা খুলতেই শেষ। দামের দিকে কেউ দেখে না। সরবরাহ কম হওয়ায় মরিচ কেনার প্রতিযোগিতা হয়। ফলে বেশি দামে আমাদের বিক্রি করতে হয়। এতে ঘাটতি তো আছেই, ক্রেতাও কমছে। এজন্য আমাদের একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
হাটবাজার মনিটারিং কর্মকর্তা এটিএম এরশাদ আলম খান জানান, আবহাওয়ার কারণে কিছুটা উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাহিদাও বেড়েছে। ফলে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন মরিচ নামলে এ সমস্যা কেটে যাবে। তারপরও আগামীকাল আমরা জেলা পর্যায়ে বাজার মনিটারিংয়ে যাব। ভোক্তাদের জিম্মি করে কেউ অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’