নীলফামারীতে পাথর বালি সিমেন্টে তৈরি হচ্ছে কংক্রিট ব্লক ইট

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী: নীলফামারী জেলায় প্রথমবারের মতো পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লক ইট তৈরির যাত্রা শুরু হয়েছে। ‘কংক্রিট ব্লক ব্যবহার করি, অল্প খরচে বাড়ি করি, কৃষি জমি রক্ষা করি, দূষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নীলফামারী সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের কানিয়াল খাতা গ্রামের মুন্সিপাড়া ক্যানেল ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় মেসার্স সাঈদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ওই কংক্রিট ব্লক (ইট) তৈরির কাজ শুরু করে।

ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আবু সাঈদ গত ১ জানুয়ারি ইট তৈরির কাজ শুরু করেন। তিনি জানান, সরকারের বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের (ইএসডিপি) আর্থিক সহযোগিতায় দূষণ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কংক্রিট ব্লক ইটের কাজ শুরু করেন।

গত বুধবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ওই কারখানায় কাজ করছেন নুর জামাল ও মানিক হোসেন নামের দু’জন কারিগর (রাজমিস্ত্রি)। তারা জানান, কাদা মাটির তৈরি পোড়া ইটের চেয়ে হাজার গুণে কংক্রিটের তৈরি ব্লক ইট শক্ত ও মজবুত। এতে পরিবেশ দূষণের ভয় নেই। অন্যদিকে মাটির উপরিভাগ কেটে ইট তৈরিতে কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। ইটভাটার ধোঁয়ায় পুড়ে যাচ্ছে ফসলি জমির ধান। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তাই আমরা সরকারের সহযোগিতায় পরিবেশবান্ধব ইট তৈরি করছি।

নীলফামারী পৌর শহরের আরাজি কানিয়াল খাতা ধনীপাড়া গ্রামে ব্লক ইটের বাড়ি তৈরি করছেন ডা. তোবারক আলী। তিনি জানান, কাদা মাটির তৈরি ইটের চেয়ে অনেক সাশ্রয় ও অল্প খরচে কংক্রিট ব্লক ইট দিয়ে বাড়ি বানানো সহজ। কাদা মাটির পাঁচটি ইটের সমান একটি ব্লক ইট। পাঁচটি ইটের দাম ৫০ টাকা আর কংক্রিট ব্লক একটি ইটের মূল্য কেরিংসহ মাত্র ৩৭ টাকা। এতে মিস্ত্রি খরচও অনেক কম। সময়ও বেঁচে যায় প্রচুর। দালান (বিল্ডিং) হয় মজবুত।

অন্যদিকে, ১০টি পোড়া ইট সমান একটি বড় কংক্রিট ব্লক ইট। ১০টি ইটের মূল্য কেরিংসহ ১০০ টাকা আর একটি বড় ব্লক ইটের মূল্য কেরিংসহ ৬৫ টাকা। এতে প্রায় একজন বাড়ির মালিকের সাশ্রয় হয় ৩৫ টাকা। অতি অল্প মূল্যে বাড়ির কাজ করতে পেরে নিজের কাছে ভালোই লাগছে। পাশাপাশি সাঈদ এন্টারপ্রাইজকে এমন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।

একই উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের মাসুদুর রহমান মাসুদ জানান, পোড়া মাটির ইটের চেয়ে কংক্রিট ব্লক ইট পরিবেশ সম্মত ও দূষণ মুক্ত হওয়ায় দিন দিন নীলফামারীতে এই ইটের চাহিদা বেড়েই চলছে। পাথর, বালি ও সিমেন্ট দিয়ে ইট তৈরি জেলায় এই প্রথম। এ কাজে ঝামেলা ও আর্থিক খরচ কম হয়। গত জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি বাড়ি তৈরি করি। বাড়িটি দেখার জন্য শত শত মানুষ ভিড় করছে।

ইএসডিপির জেলা প্রশিক্ষণ সমন্বয়কারী মো. মামনুর রশিদ জানান, দেশের ৬৪ জেলায় প্রকল্পটি চালু হলেও নীলফামারীতে এই প্রথম এর কার্যক্রম শুরু হয়। গত জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা সদরের কানিয়াল খাতা গ্রামের সাঈদ এন্টারপ্রাইজের উদ্বোধন করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী।

জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, ইটভাটার কারণে পরিবেশ দূষণ, ফসলি জমির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কংক্রিট ব্লক ইটের বিকল্প নেই। দূষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পরিবেশবান্ধব এই ইটের ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নতুন উদ্যোক্তাও সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘কংক্রিট ব্লক ব্যবহার করি, অল্প খরচে বাড়ি করি, কৃষি জমি রক্ষা করি, দূষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি’।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০