নীলফামারীতে মাঠজুড়ে হলুদের সমাহার

প্রতিনিধি, নীলফামারী : কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভের আশা করছেন নীলফামারী সদরের কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের কাছারিপাড়া গ্রামের কৃষক। গ্রামটি এখন ‘সরিষা গ্রাম’ নামে জেলায় পরিচিতি লাভ করেছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ওই গ্রামের কৃষক। বন্যা ও খরায় ধান চাষে অব্যাহত লোকসানে সরিষা চাষে আগ্রহী হওয়ার আরেকটি কারণ দেখছে কৃষি বিভাগ। ওই গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন হলুদ আর সবুজের সমাহার। একই জমিতে আমন ধান কেটে ফাও ফসল হিসেবে সরিষা চাষে লাভবান হয়েছে স্থানীয় কৃষকরা। এরপর একই জমিতে বিনা সারে অল্প পরিশ্রমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয় বলে জানান তারা। তা প্রমাণ করেছে ‘কাছাড়িপাড়ার সরিষা গ্রাম।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ছয় উপজেলায় আট হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবার অর্জিত হয়েছে আট হাজার ৬৭২ হেক্টর। এতে অতিরিক্ত আবাদ হয়েছে ৩৬ হেক্টর।

সূত্র আরও জানায়, ছয় উপজেলায় অর্জিত জমির পরিমাণ হলো, নীলফামারী সদরে তিন হাজার ৮৫০ হেক্টর, সৈয়দপুরে ৪৮২ হেক্টর, ডোমারে ৯৬৫, ডিমলায় এক হাজার ২৬২ হেক্টর, জলঢাকায় এক হাজার ২৬৮ হেক্টর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৮৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।

ওই ইউনিয়নের কাছাড়িপাড়া গ্রামের কৃষক মোক্তার হোসেন জানান, ‘দিনের পর দিন ভোজ্যতেলের (সয়াবিন) দাম বৃদ্ধি ও ধান চাষ করে বারবার লোকসানে এই গ্রামে সরিষার চাষ বেড়েছে। তিনি বলেন, এবারে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করতে খরচ হয়েছে মাত্র তিন হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় সরিষা হয় ৪-৫ মণ। প্রতি মণ সরিষা বাজারে বিক্রি হয় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা। যার মূল্য দাঁড়ায় ২০ হাজার টাকা। এতে বিঘায় লাভ হয় ১৭ হাজার টাকা।’ অপর দিকে, ‘এক বিঘায় ধান হয় ৬ মণ। আর ছয় মণ ধান ফলাতে কৃষকের ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ হয় ৬-৭ হাজার টাকা। ধানের মৌসমে প্রতি ধান বিক্রি হয় সাতশ থেকে আটশ টাকা। প্রতি বিঘায় ধান বিক্রি হয় চার হাজার ৮০০ টাকা। এতে লাভের চেয়ে লোকসানের ভাগটাই বেশি। এ কারণে ফাও ফসল হিসেবে সরিষা চাষে ঝুঁকছে কৃষক।’

একই গ্রামের সরিষাচাষি আতোয়ার হোসেন জানান, ‘এবার কৃষি বিভাগ থেকে কৃষি প্রণোদনার আওতায় বিনা মূল্যে বীজ পেয়ে দেড় বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। যা দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। এছাড়া কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা আয় করা যায়। হাল ও বীজ হলে যথেষ্ট। সেচের কোনো খরচ নেই। তিনি বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগাম জাতের সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। এবার দুই বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে।’

ওই ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রশিদুল ইসলাম জানান, ‘এবারে ১৫৬ জন কৃষকের মাঝে ৪২২ বিঘা (৫৭ হেক্টর) জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। গত বছর ছিল ১৪০ জন কৃষক ও জমির পরিমাণ ছিল ৩০০ বিঘা। সম্মিলিতভাবে উদ্বুদ্ধু করে কৃষকের মাঝে উঠান বৈঠক ও গ্রুপ মিটিংয়ের মাধ্যমে সরিষার চাষ করা হয়। এই ব্লোকে টরি-৭, বিনা-৯, বারি-৯, বারি-১৪ ও বারি ১৮ জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত কারণে দেশে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের উৎপাদিত সরিষার তেল সদরের শতকরা ২২ ভাগ চাহিদা পূরণ করবেও বলে তিনি জানান।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক আহমেদ জানান, সদরে তিন হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কুন্দুপুকুর ইউনিয়নে ‘কাছাড়িপাড়া গ্রামে’ কৃষি বিভাগের প্রণোদনার আওতায় এক কেজি করে ১৫৬ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার বিতরণ করা হয়। আর জমির পরিমাণ ৪২২ বিঘা অর্থাৎ ৫৭ হেক্টর। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উৎপাদিত সরিষার ২১ হাজার লিটার তেল উপজেলার পাঁচ লাখ জনসংখ্যার শতকরা ২২ ভাগ ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ হবে ইনশাল্লাহ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জানান, গত দুই মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে এক হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষার বেশি চাষ হয়েছে। সরিষা চাষে কৃষি বিভাগ কৃষকদের মাঝে উঠান বৈঠক, গ্রুপ মিটিং ও নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে কাছাড়িপাড়া গ্রামে ১৫৬ জন কৃষককে প্রণাদনার আওতায় এনে ৪২২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষে জেলায় সাড়া ফেলছে। ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে কৃষকরা এখন ঝুঁকে পড়ছে সরিষা চাষে। তিনি বলেন, ‘কাছাড়িপাড়া গ্রাম এখন সরিষা গ্রাম’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রামটি দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করছে। আশা করি, কৃষি বিভাগের এই সফলতা অব্যাহত থাকবে।

 

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০