নীলফামারীতে রোপা আমনের বাম্পার ফলন

শেয়ার বিজ প্রতিনিধি, নীলফামারী : নীলফামারীতে বন্যা-পরবর্তী কৃষকের রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার কৃষকরা আগের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে লাভের মুখ দেখছেন। ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের স্বস্তি ফেরেছে।

সদরের টুপামারী ইউনিয়নের নিত্যানন্দী গ্রামের কৃষক সুলতান আলী এবার পাঁচ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছেন। অন্যান্য বছরের থেকে এ বছর ফলন ভালো হয়েছে জানিয়ে বলেন, বন্যায় যেভাবে আমন ধান বানে খাইছে তাতে চরম লোকসান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সব ধকল কেটে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বন্যার পলি মাটিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের বাজার ভালো, সবকিছু মিলে লোকসান হবে না।

জেলায় সুলতানের মতো অনেক কৃষক জানায়, এবার চলতি মৌসুমে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। অন্যান্য বছর ধান বিক্রিতে খুব একটা লাভ দেখা যায় না। এবার ধানের তুলনামূলক বাজার ভালো।

উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নের বাউনাবাউনি গ্রামের মকবুল হোসেন আমন চাষের খরচের কথা বলতে গেলে বলেন, বীজতলা থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয় সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। আর এতে ধানের ফলন হবে বিঘাপ্রতি ১২ থেকে ১৪ মণ পর্যন্ত।

বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হবে এক হাজার টাকা। হিসাব অনুপাতে বিঘাপ্রতি প্রায় লাভ হবে সাত থেকে আট হাজার টাকা। তিনি বলেন, এ বছর নতুন ধানের গন্ধে ভরে উঠবে মন। গ্রামের রীতি অনুযায়ী নতুন ধানের পিঠা, পায়েস, ছেলেমেয়ের নতুন জামা, জুতা, স্কুল ড্রেস, বই খাতা কলমসহ নবান্নের উৎসবে মেতে উঠবে কৃষক।

জেলা সদরের খোকশাবাড়ী, পলাশবাড়ী, টুপামারী, সোনারায়, লক্ষ্মীচাপ, চড়াইখোলা, রামনগর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, ধান কাটার এমন চিত্র। শ্রমিকরা দলবেঁধে ধানের (আঁটি) বোঝা নিয়ে সারি সারি ফিরছেন জমির মালিকের বাড়ির উঠানে।

তবে রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া (সরকার পাড়া) গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, শ্রমিক সংকটের কথা। দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতেও মিলছে না গ্রামে লোক। অনেকেই বাদ্য হয়ে ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রী পরিবার-পরিজন নিয়ে ধান কেটে বাড়িতে তুলছেন।

জেলা সদরসহ ছয় উপজেলায় ছোটখাটো গার্মেন্ট কারখানা, শিল্প-কলকারখানা ও নানা ধরনের কাজ করছেন শ্রমিকরা। ফলে শ্রমিকের সংকট বেড়েই চলেছে।

আটজনের দল করে ধান কাটছেন দলনেতা নজরুল ইসলাম শ্রমিক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, গ্রামের সঙ্গে জেলা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় কেউ আর বসে নেই। শহরে রিকশা চালাচ্ছেন। আবার অনেকেই জেলার বাইরে গিয়ে নানা ধরনের কাজ করছেন। তাই অনেকটাই শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।

সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, বন্যা-পরবর্তী আবহাওয়া অনুকূলে ও পলি কাদার (মাটি) জন্য চলতি মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানচাষিরা (কৃষক) লাভের মুখ দেখবে এমনটাই আশা করছে কৃষি কর্মকর্তারা।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. কেরামত আলী বলেন, জেলায় এক লাখ ১০ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তা বন্যার ধকল কাটিয়ে ওই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এক লাখ ১২ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়।

তিনি বলেন, বন্যার পরও গত দুই-তিন বছরের তুলনায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে জেলায় প্রতিবছরের মতো শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকের ঘরে ধান তুলতে বেশ বেগ পেতে হবে। এজন্য জেলা ও উপজেলা মাঠপর্যায়ে হার্ভেস্ট ও কম্বাইন্ড মেশিন দেওয়া হয়েছে। এতে সময়ও কম লাগবে ও কৃষকের আর্থিক সাশ্রয় হবে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০