কেজিতে দাম বেড়েছে ৬ টাকা

নীলফামারীতে লাগামহীন চালের বাজার

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী: অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাস আমনের ভরা মৌসুম। এ মৌসুমে কৃষকের বাড়ি নতুন ধানের ম-ম গন্ধে ভরে যায় উঠান। কিন্তু এবার সেই গন্ধ শেষ হতে না হতেই চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। নীলফামারীতে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। আর এতে বিপাকে পড়েছেন নি¤œ আয়ের মানুষ।

জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের সিংদই গ্রামের দিনমজুর মমতাজ উদ্দিন নিজ ভাষায় বলছিলেন, ‘অগোন পুষ মাস এতবারি চাউলের দাম জীবনে দ্যাখ নাই। আগত এই দুই মাস ফেলে ছেড়ে বাড়ির ভাত খাছিনো। এখন এক বেলার ভাত দুই বেলা খেয়া দিন কাটেবার নাগেছে। এক কেজি ২৮ জাতের চাউল ৫০ থেকে ৫২ টাকা। হামার আর বাঁচিবার উপায় নাই।’

একই এলাকার দিনমজুর মহির উদ্দিন বলেন, ‘বাঁশের কাম (কুঁড়েঘর তৈরি করে) করি সংসার চালাও। কোনো দিন কাম হয়, কোনো দিন হয় না। ছয়জন মানুষের সংসার নুন আনতে পানতা ফুরায় (শেষ)। ঠাণ্ডায় কাজও করায় না গৃহস্থবাড়ির লোক। কিন্তু পেট তো মানে না। পুষ মাসেও এতাবাড়ি চাউলের দাম গরিব মানুষ বাঁচে ক্যামন করি। চাউলের দামটা এনা কম হলে খ্যায়া পড়ি বাঁচিনো হায়।’

নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘ভ্যানের আয়ে ছয়জন মানুষ খাই। ব্যাটারিচালিত ভ্যান চলাচল করায় এখন ভাড়া পাওয়া যায় না। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পাওয়া যায়। চালের প্রয়োজন হয় আড়াই থেকে তিন কেজি। তাহলে মরিচ, পেঁয়াজ, আলু কিনবো কী দিয়ে। এর সঙ্গে সয়াবিন তেলের দামও চড়া। সরকার এগুলো দেখে না কেন?’

এদিকে চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জেলা শহরের চাল বিক্রেতা ও আড়তদার আনোয়ার হোসেন বাবুল বলেন, গত ১৫ দিন ধরে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। প্রকারভেদে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। মোটা ২৮ জাতের চাল ১৫ দিন আগে ৪৫ টাকা ছিল, তা এখন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫১ থেকে ৫২ টাকা। স্বর্ণা ৪৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৩ টাকা, মিনিকেট জাতের চাল কেজিতে সাত টাকা বেড়ে ৫৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘চালের দাম বাড়ায় কেনাবেচাও কমেছে আমাদের।’ এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বন্যাখরায় ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় যেটুকু পেয়েছে কৃষক তা কম দামে বিক্রি না করায় ধানের দাম বেশি। আর ধানের দাম বেশি হলে চালের দাম তো বেশি হবেই। মিলাররা গ্রাম থেকে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা বস্তা দরে ধান কিনেছে, তাই চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ধারণা করা হচ্ছে, আমদানিকৃত চাল ছাড়া দাম আরও বাড়তে পারে। সরকারের উচিত হবে চাল আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। এটা হলে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে।’

এ বিষয়ে জেলা শহরের নিউবাবু পাড়ার গৃহিণী আলেয়া বেগম বলেন, ‘করোনার পর থেকে মেসের রান্নার কাজও কমে গেছে। চারজন মানুষের দুবেলা রান্না করে দৈনিক বেতন পাই ৫০ টাকা। তাও মাসের শেষে বেতন হয়। অতিকষ্টে তিনজনের পরিবার চালাতে হয়। আর যেভাবে চালের দাম বাড়ছে না খেয়ে থাকার মতো অবস্থা। অন্তত চালের দামটা সাধ্যের মধ্যে থাকলেও লবণ দিয়ে খেয়েও বাঁচা যায়। চালের খুচরা দোকানদাররা একচেটিয়া দাম নিচ্ছে। এসব দেখার কেউ নেই।’

ভোক্তাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শহরের আজিজুল হক অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আজিজুল হক অস্বীকার করে বলেন, ‘চালের বাজার এখন মাটিতে পড়ে গেছে।’ এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার এলসির মাধ্যমে চাল আমদানি করায় দুই হাজার ৬০০ টাকার ২৮ জাতের চাল এখন দুই হাজার ৫৫০ টাকা, মোটা চাল ১ হাজার ৯৫০ টাকার জায়গায় ১ হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমেছে। এ পরিস্থিতিতে লোকসান গুনতে হবে। তবে খুচরা বাজারে বেচাকেনার কথা বলতে পারব না। তাদের হিসাব আলাদা।’

এ বিষয়ে নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এলিনা আকতার মোবাইল ফোনে বলেন, ‘কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য অস্থিতিশীল করার জন্য সবসময় অপচেষ্টা চালিয়ে থাকে। আমরা এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা পেলে দ্রুত বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। চাল ছাড়াও চিনি, ডাল ও সয়াবিনের বাজার যাতে সহনীয় পর্যায় থাকে সে জন্য প্রয়াজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে কেউ যদি অকারণে চালের মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করে, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০