তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী: নীলফামারীসহ দেশের উত্তরের জেলাগুলোয় জেঁকে বসেছে শীত। আর শীতে ঠাণ্ডাজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এর মধ্যে শিশুদের অন্যতম রোগ ডায়রিয়া। নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন দিনে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ৯৪ জন। এর মধ্যে শিশু ৬০ জন ও বয়স্ক ৩৪ জন।
গত শনিবার সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩১ জন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্স নাহিদ পারভীন জানান, এ ওয়ার্ডে ৩১ জনের মধ্যে শিশু ২০ ও বয়স্ক ১১ জন। এদিন সকালে চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে ৯ জন। বর্তমানে ২২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নাহিদা জানান, ওই ২২ জনের সাথে শনিবার বিকাল পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন আরও ৯ জন। এই নিয়ে মোট ৩১ জন। রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে সেখানে গাদাগাদি করে শিশুদের চিকিৎসা নিতে হয়। এছাড়া শীত বাড়ার পাশাপাশি বয়স্করাও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে অধিকাংশ শিশু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ওই ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা ২৫টি।
হাসপাতালের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ওয়ার্ডে ৫১, নারী ৫৯, নবজাতক ২৪, শিশু ৪১, গাইনিতে ২৫ জন, ডায়রিয়ায় ৩১ ও সার্জারি ৬৬ জন। এছাড়া বহির্বিভাগে ১৮৬ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।
ওই ওয়ার্ডের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের খলিশাপচা গ্রামের শান্তিবালা (৮৫) গত ১৩ ডিসেম্বর ডায়রিয়াজনিত রোগে ভর্তি হয়। তিনি বলেন, ‘তিন দিন ধরে পানির মতো পায়খানা হয়। বাড়ির ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে অসুখ আরও বেড়েছে। হাসপাতাল আসিও কমে না। ডাক্তার খালি কয় স্যালাইন খাও, স্যালাইন খাও ওষুধ দেয় না।’
পৌর শহরের শান্তিনগর মহল্লার ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু কাশফিয়ার মা রোজিনা বেগম বলেন, আমার দশ মাসের শিশু কাশফিয়া হঠাৎ পাতলা পায়খানা শুরু হয়। তারপর সকালে হাসপাতালে ভর্তি করার পর কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, এ রকম ছোট ছোট বাচ্চা আরও অনেক ভর্তি হচ্ছে। আবার অনেকেই বিছানা সংকটের কারণে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছে।
ওই ওয়ার্ডে জেলা সদরের গোড়গ্রাম ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ৫নং বেডের শিশু মেজবাউল হকের মা লিপি বেগম জানান, পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হয়ে আজ (রোববার) সকালে হাসপাতালে ভর্তি হলে ডাক্তার বলেন, শিশুটির ডায়রিয়া হয়েছে। ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, মেজবাউলের মতো অনেক শিশু এখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল আউয়াল বলেন, প্রতি বছরে শীতকালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এ সময় শিশুদের নিয়ে মায়েদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। তাদের ভূমিকা ডাক্তারের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, কুয়াশায় শিশুদের ঘরের বাইরে বের করা যাবে না। অবশ্যই গরম কাপড় পরাতে হবে। কুসুম গরম পানি দিয়ে শৌচ কার্য করাতে হবে। তবে খাওয়ার স্যালাইনের বিকল্প নেই।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. গোলাম রসুল রাখি জানান, হঠাৎ ঠাণ্ডা বেড়ে যাওয়ায় শিশু ডায়রিয়া, বয়স্কদের নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, তুলনামূলকভাবে শীতে শিশুদের এই জাতীয় রোগ বেড়ে যায়। দেরি না করে ডায়রিয়া শুরুর সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। হাসপাতালে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ও ওষুধপত্র আছে। এতে বড় ধরনের আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।