প্রতিনিধি, নীলফামারী: ধান, পাট, আদা, হলুদ ও ভুট্টার চেয়ে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষবাদ লাভজনক। এছাড়া এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ক্ষেতে কপির বাম্পার ফলন হয়েছে বাম্পার। কথাগুলো বলেন, নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দুর্বাছুড়ি গ্রামের কপি চাষি শরৎ চন্দ্র রায়।
একই গ্রামের গন্দেয়া পাড়ার কপি চাষি মজিবর রহমান জানান, অন্য ফসলের চেয়ে কপি চাষে খরচ ও শ্রম তুলনামূলক কম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৭০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে চার হাজার ৫৩০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১৯ হাজার ৭০ মেট্রিক টন।
ওই গ্রামের প্রধান ফসল এখন পাতাকপি ও ফুলকপি। চলতি মৌসুমে অনাবাদি ছাড়াও উঁচু জমিতে আগাম কপি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। মাচা পদ্ধতিতে আশ্বিনে চারা তৈরি করেন কৃষক। এরপর আশ্বিনের শেষ ও কার্তিকে কপি রোপণ শুরু করেন তারা।
কপির ক্ষেতে কথা হয়, লক্ষ্মীচাপ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র নুরজ্জামানের সঙ্গে। সে জানায়, প্রতি বছর কপি বিক্রির টাকায় বাড়ির খরচ ও তাদের চার ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচ চলে।
কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, এবার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে কপি চাষ করেছি। এর মধ্যে দেড় বিঘা (উঁচু জমি) জমির কপি বাজারে বিক্রি শুরু করেছি। ভালো দাম পাচ্ছি।
কৃষক কৃষ্ণ রায়, সহিদুল ইসলাম ও আলী হোসেন বলেন, এক বিঘা জমিতে কপি চাষে খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় উৎপন্ন হয় ৭৫ থেকে ৮০ মণ। এতে সার, বীজ, শ্রমিক, হাল, নিড়ানি ও পরিবহন খরচ (১৫ হাজার টাকা) বাদে লাভ হবে এক লাখ ৭৭ হাজার টাকা।
কৃষক আলী হোসেন বলেন, প্রতি বিঘায় কপি চাষ করা যায় চার থেকে সাড়ে চার হাজার (পিচ)। ভরা মৌসুমে প্রতিটি কপি (দেড় কেজি) ১৫ টাকা করে বিক্রি হলে চার হাজার ৫০০ কপি বিক্রি হয় ৬৭ হাজার ৫০০ টাকায়। এতে খরচ (১৫ হাজার টাকা) বাদে প্রতি বিঘায় লাভ হয় ৫২ হাজার ৫০০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কপি চাষে লাভবান হতে পারব।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, ওই গ্রামের সিংহভাগ মানুষ আগাম কপি চাষ করেন। তাদের প্রদর্শনী প্লটসহ কপি চাষে নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ৪৫ থেকে ৫৫ দিনের মধ্যে কপি বাজারজাত করা যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, দুর্বাছড়ি গ্রামকে ‘কপি গ্রাম’ বললে ভুল হবে না। ওই ইউনিয়নের দুর্বাছুড়ি গ্রামে আগাম ফুলকপি ও পাতাকপির ব্যাপক চাষ হয়। ওই এলাকার মাটি কপি চাষের জন্য উপযোগী। কারণ বালাইনাশক ওষুধ ছাড়াই কপির বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম ও ফলন দুটোই ভালো পাওয়ায় কৃষকের সবজি চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। কপির বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটছে।