নীলফামারীতে সবজির ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিশেহারা কৃষক

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী: নীলফামারীতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে ভালো ফলন পেলেও বাজারে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। মুলা মাত্র দুই টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এছাড়া ফুলকপি পাঁচ টাকা ও বাঁধকপি তিন থেকে চার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় উৎপাদিত সবজি এখন পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। দাম কম হওয়ায় চাষিদের লোকসানও গুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় পাঁচ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। আর এ যাবত অর্জিত জমির পরিমাণ দুই হাজার ৫৬৫ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন সবজি। এর মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লাউ, বেগুন, গাজর, শিমসহ নানা ধরনের সবজি রয়েছে। নালীফামারীতে উৎপাদিত সবজি জেলার স্থানীয় বাজারগুলোর চাহিদা পূরণ করে এক সময় দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হতো। কিন্ত এবার জেলার বাইরে এসব সবজি সেভাবে বিক্রি করতে পারছেন না বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের সবজি চাষি মাহাবুল ইসলাম বলেন, দেশের অন্যান্য জেলায় সবজির চাহিদা না থাকায় স্থানীয় কৃষকরা কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এ কারণে কৃষকরা সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। স্থানীয় বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে তা দিয়ে উৎপাদিত ফসলের খরচের অর্ধেকও উঠে আসবে না বলে জানান তিনি।

সদর উপজেলার ল²ীচাপ ইউনিয়নের রামগঞ্জ হাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুলকপি, বাঁধাকপি পাঁচ টাকা আর বেগুন ছয় টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে, মুলা বিক্রি হচ্ছে দুই টাকা কেজি দরে। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকা। এসব সবজি খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন।

ওই বাজারের ব্যবসায়ী আলাল মিয়া ও সন্তোষ রায় বলেন, ‘শীতের সবজি এবার পানির দরে বিক্রি করছি’। তারা বলেন, মাঠপর্যায়ে কৃষক তো আরও কম দরে আমাদের কাছে বিক্রি করেছেন। এবার সবজি চাষে কৃষকরা লোকসান ছাড়া লাভের মুখ দেখতে পাবে না। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি যথেষ্ট ভালো আবাদ হয়েছে। কার সবজি কে খায় এমন অবস্থা। এর প্রভাব পড়েছে। তবে আলুর দাম বেশ চড়া, পুরোনো আলু বাজারে নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বারবার বৃষ্টির কারণে নতুন আলুর উৎপাদন কম। তাই এখনও নতুন আলু ৬০ টাকায় ক্রেতাদের কিনে খেতে হচ্ছে বলে তারা জানান।

সদরের ল²ীচাপ ইউনিয়নের সুখধন গ্রামের কৃষক মোনতাজ আলী বলেন, ‘এবার সবজি চাষ করে মাথায় হাত পড়েছে। চাহিদার তুলনায় স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় এমনটি হয়েছে। আমি তিন বিঘা জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলার আবাদ করেছি, খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আর বিক্রি করেছি ৩৫ হাজার টাকা। তিন বিঘায় লোকসান গুনতে হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। বীজ, সার, শ্রমিক, কীটনাশক ও হালÑএসব ধারদেনা করে করেছি। এখন টাকা কীভাবে পরিশোধ করব ভেবে পাচ্ছি না। সারা বছরের সংসারের খরচ ছেলেমেয়ের লেখাপড়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি।’

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। যেভাবে ফলন হয়েছে সে অনুযায়ী বাজারে কৃষক দাম পাচ্ছে না বলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০