নীলফামারীতে ‘৬০ টাকার বাজার’

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী: আজ কিচেন মার্কেটে যেটাই নেবেন ৬০ টাকা পোয়া (২৫০ গ্রাম)। বাজার ঘুরে এমন কথা বলেন, নীলফামারী সদরের পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের দিঘলটারী গ্রামের আবু কালাম। তিনি কিনেছেন এক পোয়া মরিচ ৬০ টাকা, এক পোয়া রসুন ৬০ টাকা, ১০০ গ্রাম ধনিয়া পাতা ৬০ টাকা ও দেশি জাতের যেকোনো লাউ ৬০ টাকা। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি চাকরিজীবী বাজার করতে এসে বলেন, ‘এক কেজির ওপরে ইলিশ দুই হাজার ২০০ টাকা, দেড় কেজির ওপরে দুই হাজার ৮০০ টাকা, খাসি প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, করলা প্রতিকেজি ৫০ টাকা ও কাঁচা মরিচ প্রতিকেজি খুচরা ২৪০ টাকা, আদা প্রতিকেজি ৩০০ টাকা, পটোল প্রতিকেজি ৫৫ টাকা ও ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১২০ টাকা। এভাবে ওই বাজারের বর্ণনা দিলেন তিনি।

বাসাবাড়িতে রান্না করেন সখিনা বেগম (৫৬)। মরিচ কিনতে এসে তিনি বলেন, ‘কাঁচা মরিচ ছাড়া মাছ-মাংস রান্নায় স্বাদই হয় না। কিন্তু এত দামে মরিচ নিয়ে গেলে বাড়িওয়ালা বিশ্বাস করবে না। তাই অন্য খরচ করে মরিচ ছাড়াই বাসায় যাচ্ছি।’ ওই বাজারে সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের কৃষিশ্রমিক আশরাফ আলী (৪৪) জানান, ‘বৃষ্টি শুরুর পাঁচ দিন পর বাজারে এসে যা দেখলাম, যে টাকা নিয়ে এসেছি তা দিয়ে এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে কিছুই কেনা সম্ভব নয়। তারপরেও রসুন, মরিচ, পেঁয়াজ, একটু আদা, যেটা না কিনলে নয় সেটুকু কিনলাম।’ তিনি বলেন, ‘যেটাই খান মরিচ লাগবেই, সেই মরিচ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি আর আমি খুচরায় নিলাম ২৪০ টাকা। কেজিতে ৪০ টাকা লাভ করছেন দোকানদাররা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাই বলে লাভ কি কিছু করতে পারবেন। উপায় নেই খেতে তো হবে।’

আদা, হলুদ, রসুন, পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচসহ সব ধরনের সবজির মূল্য বৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছে। কাঁচা মরিচসহ সব ধরনের সবজি এখন নাগালের বাইরে। টানা চার-পাঁচ দিনের বৃষ্টির কারণে মরিচের দামে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। সদরের কাঞ্চন পাড়া গ্রামের কৃষক মোনতাজ আলী (৪৮) জানান, ‘টানা পাঁচ দিন বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে মরিচ গাছ মরে গেছে। তাই ফলন নেই। যারা উঁচু জমিতে মরিচ আবাদ করছে, শুধু তারাই একটু বাজারে আনছে। বাজারে মরিচের আমদানি না থাকার ফলে খুচরা দোকানদাররা যেমন খুশি, তেমন দামে বিক্রি করছে।’

গতকাল শনিবার সকালে নীলফামারী কিচেন মার্কেটের আড়তদার ও সিহাব ভাণ্ডারের মালিক নুর আমিন বলেন, কাঁচা বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কী কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত চার-পাঁচ দিনের বৃষ্টির কারণে বগুড়া ও দিনাজপুর থেকে মরিচ আমদানি হয়নি। আগে ইন্ডিয়ান মরিচ-পেঁয়াজ আসত সেটাও বন্ধ। যেটুকু কেনাবেচা হচ্ছে সেগুলো স্থানীয় কৃষকরা সকালবেলা নিয়ে আসেন। দোকানদাররা কেউবা রাস্তায় ধরেন, কেউবা আগেই গিয়ে বেশি দামে কিনে নেন। তবে আমরা পাইকারি প্রতিকেজি ২০০ টাকা করে বিক্রি করছি। খুচরায় কে কত দামে বিক্রি করছেন, তা সঠিক বলতে পারব না।

একই বাজারের আড়তদার আনোয়ার হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে চার-পাঁচ দিন আড়ত বন্ধ ছিল। এ কারণে বস্তায় মরিচ-পেঁয়াজ পচে গেছে। আজকে শনিবার সকাল থেকে আকাশ পরিষ্কার হওয়ায় লোকজন বাজারে আনাগোনা করছে। এতে সব ধরনের কাঁচামালের চাহিদাও বেড়েছে। প্রকারভেদে পাইকারিতে কাঁচা মরিচ কেজিপ্রতি ১৯৫ থেকে ২১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় কত বিক্রি হচ্ছে জানি না।

জেলা হাটবাজার মনিটরিং কর্মকর্তা এরশাদ আলম খান জানান, গত পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে সবজিসহ কাঁচা বাজারে দাম একটু বেড়েছে। আবহাওয়া ভালো হলে এ সমস্যা কেটে যাবে। কিন্ত বর্ষা মৌসুমে মরিচের উৎপাদন কমে যাওয়ায় কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে দ্রুত বাজার মনিটরিং শুরু করা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০