Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:30 am

নীলফামারী অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহে অগ্রগতি নেই

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর : সৈয়দপুর-নীলফামারী অঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি থাকলেও সে বিষয়ে অগ্রগতি নেই দীর্ঘদিন ধরে। সরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিনেশন কোম্পানি (আইআইএফসি) প্রতিশ্রুত পাইপলাইন স্থাপনের লক্ষ্যে কয়েক দফা সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। তাদের সমীক্ষার প্রতিবেদন পেট্রোবাংলার গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) কাছে হস্তান্তর করা হলেও দীর্ঘ তিন মাসেও তার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এদিকে কয়েক দফা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করায় এ অঞ্চলের শিল্প-উদ্যোক্তারা উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তবে এখন প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন শিল্প-মালিক ও উদ্যোক্তারা। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর জেলা সফরকালে এ অঞ্চলে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে সৈয়দপুরের শিল্প-কারখানা, উত্তরা ইপিজেড ও প্রস্তাবিত নীলফামারী ইকোনমিক জোন পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পেট্রোবাংলার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইআইএফসির প্রকৌশলীরা সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গত বছরের ১৯ ও ২৯ জুলাই দুই দফা এবং পরের মাসে তৃতীয় দফা সৈয়দপুর-নীলফামারী ও রংপুরে ফিল্ড ভিজিট করেন। তিন দফা ফিল্ড ভিজিট শেষে তাদের সুপারিশমালা জিটিসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। কিন্তু দীর্ঘ তিন মাসেও প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

সূত্র জানায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আইআইএফসি ফিল্ড ভিজিটে এ অঞ্চলে কতগুলো শিল্প কারখানা আছে, আরও কতগুলো নতুন কারখানা হতে পারে ও সেই কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাহিদা কেমন হবে তা জানতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তাছাড়া কোন দিক দিয়ে পাইপ নিয়ে গেলে ভৌগোলিক দিক দিয়ে দূরত্ব কমবে ও আর্থিকভাবে সাশ্রয় হবে তাও নির্ণয় করা হয়।

জানা গেছে, বর্তমানে সৈয়দপুরে জ্বালানিচালিত শিল্প-কারখানা আছে ৫০টি। এছাড়া রংপুরে ৫১টি ও উত্তরা ইপিজেডে ২৭টি শিল্প-কারখানা রয়েছে। এছাড়াও নীলফামারীতে নির্মাণাধীন সাড়ে তিনশ’ একরের ইকোনমিক জোনসহ সম্ভাব্য শিল্প-কারখানার সংখ্যাও হিসাবে নেওয়া হয়েছে।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহসভাপতি মো. মোস্তফা বলেন, ব্যবসায়ীরা গ্যাস সঞ্চালন লাইনের অপেক্ষায় আছেন। নতুন শিল্প-কারখানা গড়ার পরিকল্পনা থাকলেও তারা তা করতে পারছে না। বহু শিল্প উদ্যোক্তা নতুন শিল্প স্থাপনের অপেক্ষায় বসে আছেন। তিনি অবিলম্বে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করার আহ্বান জানান।

সৈয়দপুর রয়্যালেক্স মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক রাজ কুমার পোদ্দার বলেন, পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ সৈয়দপুর-নীলফামারীবাসীর প্রাণের দাবি। এ অঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন লাইন না থাকায় নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না। পণ্য উৎপাদন খরচ বেশি পড়ায় শিল্পেরও প্রসার ঘটছে না। এছাড়াও সৈয়দপুর-নীলফামারী অঞ্চলে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন করার সিদ্ধান্ত আছে সরকারের। এ সময় গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপন দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করার জোর দাবি জানান তিনি।

আইআইএফসির উপ-পরিচালক শরিফুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ও আগামী ২০ বছরে এখানে গ্যাসের চাহিদা কি হবে এবং কোন দিক দিয়ে পাইপলাইন স্থাপন করলে সুবিধা হবে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। এর সুপারিশমালার আলোকে জিটিসিএল এখন পাইপ স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করবেন। তবে কবে নাগাদ দরপত্র আহ্বান করা হবে তা জানাতে পারেননি তিনি।

তিনি বলেন, পাইপের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত তরলকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ করা হবে। প্রথমদিকে চাহিদা ২২ থেকে ২৩ ঘন লিটার হলেও পরে তা ১৮০ ঘন লিটার ছাড়িয়ে যাবে।

আইআইএফসির একটি সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে উত্তরা ইপিজেড পর্যন্ত প্রায় ১৬১ কিলোমিটার পাইপ স্থাপনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা।