নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে তিল ধারণের ঠাঁই নেই

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী: কনকনে শীতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। নীলফামারী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আসন সংখ্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, ডায়রিয়া, নবজাতক ও শিশু ওয়ার্ডে বিছানায় মিলছে না রোগীর ঠাঁই।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৭৮ জন। তবে ডায়রিয়া, শিশু ও নবজাতক ওয়ার্ডে রোগীর চাপ ছিল অনেক বেশি। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় এক হাজার ১০০ জন রোগী। আন্তঃবিভাগে ভর্তি রোগীর মধ্যে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ওই হাসপাতালের ডায়রিয়া, শিশু ও নবজাতক ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, রোগীর গাদাগাদি অবস্থা। ২৫ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডটিতে বিভিন্ন বয়সের ৩১ জন, শিশু ওয়ার্ডে ১০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছে ৪০ জন ও নবজাতক ১০ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৮ জন। শয্যা সংকটের কারণে এক বিছানায় দুই থেকে তিনজন শিশু রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আবার অনেকের ঠাঁই মিলছে বারান্দায়।

শিশু ওয়ার্ডে ৬ নম্বর বিছানার আট মাস বয়সী তাসনিমের মা আলেয়া বেগম বলেন, ‘গত শুক্রবার তাসনিমের সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করি। কিন্তু বিছানা সংকটের কারণে এক বিছানায় দুজনকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া বাথরুম, টয়লেট ও পানির সংকট একটি বড় সমস্যা।’

ওই ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্স মিরা রানী রায় জানান, প্রত্যেক বছরেই শীতে এসব ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। বিশেষ করে নবজাতক ও শিশু শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাদের সেবা দিতে আমাদের অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়। তারপরও আমরা সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

নবজাতক ওয়ার্ডের ছয় মাস বয়সী রহমতুল্যার মা সোনালী বেগম জানান, ‘গত শুক্রবার বিকালে জ্বর, সর্দি, কাশি ও বুকে ব্যথা নিয়ে ছেলেটাকে ভর্তি করি। কিন্তু এখানে বিছানাত মোর ছাওয়াসহ (ছেলে) আরও একজন আছে, না হয় ঘুমিবার জাগা, না হয় বসিবার জাগা, রাত জাগি থাকিবার নাগছে।’

ওই হাসপাতালে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আব্দুল আউয়াল জানান, শীতে শিশুরা ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এ ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা ডাক্তারের চেয়ে বেশি। শিশুদের গরম কাপড়, গরম খাবারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. গোলাম রসুল রাখি জানান, ‘শীতের কারণে শীতজনিত নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। পাশাপাশি যাদের হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগ আছে তাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এসব রোগের মধ্যে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা।’ এ জাতীয় রোগ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবু আল হাজ্জাজ জানান, শীতে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা একটু বেশি হয়। হাসপাতালে রোগীর সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকরা নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া সরকার প্রচুর ওষুধ বরাদ্দ দিয়েছে। শীতজনিত এসব রোগ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।   

উল্লেখ্য, নীলফামারী সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী এক সপ্তাহ এ আবহাওয়া চলমান থাকতে পারে।

অন্যদিকে, জেলার ডিমলা আবহাওয়া অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, নীলফামারী সীমান্তঘেঁষা ডিমলা উপজেলায় সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি বলেন, উত্তর থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়া কাবু করে ফেলে জেলার মানুষকে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০