দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি জেলা নীলফামারী। দুই শতাধিক বছর আগে এ অঞ্চলে নীল চাষের খামার স্থাপন করে ইংরেজ নীলকররা। স্থানীয় কৃষকদের মুখে নীল খামার রূপান্তরিত হয় নীলখামারীতে। আর এই নীলখামারীর অপভ্রংশ হিসেবে উদ্ভব হয় নীলফামারী নামের। নীলফামারী ঐতিহ্যবাহী ও জেলার প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীলফামারী সরকারি কলেজ। ১৯৫৮ সালের ১৬ মে প্রতিষ্ঠিত হয় নীলফামারী কলেজ।
বর্তমানে কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার এবং ১৪টি বিষয়ে অনার্সসহ মোট ১৫টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। কলেজে শিক্ষক পদ সংখ্যা ৭৬ জন থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ৫০ জন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কোনো কলেজে অনার্স কোর্স থাকলে প্রতি বিষয়ের জন্য ছয় থেকে সাতজন শিক্ষক থাকার কথা। রয়েছে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, লাইব্রেরির সেমিনারে বইয়ের সংকট। দুঃখজনক হলেও সত্য, জেলার প্রধান বিদ্যাপীঠে প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য নেই কোনো পরিবহন ব্যবস্থা। ক্যাম্পাস থেকে যাদের বাড়ি ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরে, তাদের থাকতে হয় মেসে। চলতে হয় পরিবারের টাকায় কিংবা টিউশন করে। আর যাদের বাড়ি ১৫-২০ কিলোমিটারের আশপাশ বা তারও বেশি তাদের যাতায়াত করতে হয় গণপরিহনে কিংবা সাইকেল চালিয়ে। ফলে ক্লাসে সময় মতো উপস্থিত হতে পারে না। দীর্ঘ পথ গণপরিবহনে বা সাইকেলে এসে পরীক্ষায় বসার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে। আজকের প্রজš§ আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আগামী দিনে তারাই দেশকে পরিচালনা করবে, দেশকে নেতৃত্ব দেবে। আর ভবিষ্যৎ প্রজš§কে সুস্থ ও সুন্দর মানসিকতা নিয়ে শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসন ও সরকারের কাজ।
জলঢাকা টেঙ্গনমারী থেকে নীলফামারী সরকারি কলেজের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। ফলে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে গণপরিহনে যাতায়াত করতে হয়। ডোমার থেকে ২০ কিলোমিটার রাস্তা ৮০ টাকা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। যাদের বাড়ি সৈয়দপুর রোডে ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে তাদেরও এ রকম ভাড়া প্রতিদিন গুনতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষার্থী চাইলেও প্রতিদিন ক্লাসে আসতে পারে না। ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকতে না পেরে বঞ্চিত হয় ক্লাস থেকে শুরু করে অন্য সুযোগ-সুবিধা থেকে। শহর থেকে অন্তত তিনটি রুটে কলেজের পরিবহন থাকলে শিক্ষার ব্যয় বাবদ প্রতিদিন পরিবহন ভাড়া থেকে মুক্তি মিলত অনেক শিক্ষার্থীর। গণপরিবহনের ভোগান্তি কিংবা সাইকেল চালিয়ে এসে ঘামে ভেজা ক্লান্ত শরীর নিয়ে ক্লাসে কিংবা পরীক্ষার হলে ঢুকতে হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থী ক্লাসে বা পরীক্ষায় বসার মতো মনোযোগ-মানসিকতা থাকে না। কলেজের ছাত্রছাত্রীর জন্য ১টি করে হোস্টেল আছে, সিট সংখ্যা শিক্ষার্থীর তুলনায় অপ্রতুল। মেয়েদের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ হলেও এখন হোস্টেল চালু হয়নি। দূর-দূরান্ত থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা হোস্টেলে সিট না পেয়ে মেসে ওঠে। ফলে খরচ বেড়ে যায়। আবাসিক সংকট নিরসনে নতুন ভবন নির্মাণ করতে হবে। বেশিরভাগ বিভাগে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী একই শৌচাগার ব্যবহার করে থাকেন। ছোট আকারে একটি উš§ুক্ত শৌচাগার থাকলেও সেটি ব্যবহারযোগ্য নয়। প্রতি বিভাগে পর্যাপ্ত শৌচাগার নির্মাণ বাদেও ক্যাম্পাসে উš§ুক্ত শৌচাগার নির্মাণ করতে হবে। কলেজে একটি লাইব্রেরি থাকলেও পর্যাপ্ত বই নেই। ছাত্ররা পাঠ্যবইয়ের বাইরে বিভিন্ন রকম বই পড়ে জ্ঞান আহরণ করবে। ছাত্রদের লাইব্রেরি বিমুখী কারণ খুঁজে বের করে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলে লাইব্রেরির টেবিলে ফেরাতে হবে। মানসম্মত খাবার জন্য নেই কোনো ক্যান্টিন।
শিক্ষায় নিন্মহার থেকে উত্তরণের জন্য, বাড়ি থেকে আসা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সুস্থ মানসিকতা নিয়ে ক্লাশ উপস্থিত হওয়ার জন্য, সর্বোপরি গণপরিহনের অতিরিক্ত ভাড়া ও ভোগান্তি থেকে মুক্তির জন্য নীলফামারী সরকারি কলেজে বাস চালুসহ সব সংকট ও অব্যবস্থাপনা সমস্যার সমাধান করা সময়ের দাবি।
জাফর হোসেন জাকির
শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ
নীলফামারী সরকারি কলেজ