নিজস্ব প্রতিবেদক: ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুল হক নুরসহ কয়েকজনের ওপর হামলার ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দুই নেতাকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ দুজন হলেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য।
গতকাল দুপুরে ঢাকার শাহবাগ এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয় বলে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন।
আল মামুন ছাত্রলীগের গত কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপসম্পাদক পদে ছিলেন। আর তূর্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান জানান, দুজনকে আটক করা হলেও হামলার ঘটনায় গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
এর আগে রোববার দুপুরে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একটি সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচির পর ডাকসু ভবনে নুরদের ওপর হামলা হয়। ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীকেও সেই হামলায় দেখা যায়।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ভিপি নুরের কক্ষে ঢুকে বাতি নিভিয়ে সেখানে থাকা সবাইকে এলোপাতাড়ি পেটান বলে আহতদের ভাষ্য।
হামলায় আহত নুরসহ ২৮ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা তুহিন ফারাবীকে রাতে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে।
শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় সোমবার লাইফ সাপোর্ট খুলে ফারাবীকে নিউরোলজি ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। এখন নুর, ফারাবীসহ মোট পাঁচজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এদিকে ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সঙ্গীদের ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববারের ওই হামলার ঘটনাকে ‘অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করা হয়।
‘এ ঘটনাটি কেন ও কীভাবে সংঘটিত হলো এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত, তা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করার জন্য কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেনকে আহ্বায়ক করে ৬-সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে,’ বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেনÑশামসুন নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ সুপ্রিয়া সাহা, সিনেট সদস্য অসীম সরকার, স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ মো. মহিউদ্দিন, সিন্ডিকেট সদস্য মো. মিজানুর রহমান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ মাঈনুল করিম।
ঘটনা তদন্ত করে কমিটিকে ছয় কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সঙ্গীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ থেকে প্রক্টর একেএম গোলাম রাব্বানীর পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
গতকাল ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ সমাবেশে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ‘যে প্রক্টর সন্ত্রাসীদের হাত থেকে ছাত্রদের রক্ষা করতে পারেন না, তার পদে থাকার কোনো বৈধতা নেই। অবিলম্বে তার পদত্যাগ করতে হবে।’
সমাবেশের আগে দুপুরে ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য’র ব্যানারে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে।
এদিকে নুরুল হকের ওপর হামলার পর এবার ডাকসু ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হয়ে গেছে। কে বা কারা ফুটেজগুলো গায়েব করল, সে ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই কর্তৃপক্ষের।
ডাকসু ভবনের বাইরে এবং ভেতরে মিলিয়ে মোট ৯টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা আছে। ক্যামেরার ফুটেজগুলো ধারণ করা হতো ডাকসুর সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আবুল কালাম আজাদের কক্ষে। সে কক্ষে একটি মনিটর এবং একটি সিপিইউ ছিল। কিন্তু ডাকসু ভবনে নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনার পর সেই মনিটর এবং সিপিইউয়ের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।