Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:45 am

নূরজাহান গ্রুপের এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

জয়নাল আবেদিন: নূরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ রতনসহ তিনজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। পাশাপাশি গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও পুলিশের বিশেষ শাখায় পাঠানো হয়েছে এই আদেশের কপি। গতকাল এই নির্দেশনা জারি করেন চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ১১৮ কোটি ৫০ লাখ ৫১ হাজার ৮৮৮ টাকা খেলাপি হওয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। জহির আহমেদ রতনসহ তার বাবা আলহাজ আবদুল খালেক ও তার মা নুরজাহান বেগমকেও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তথ্যমতে, নূরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে ১৫টির বেশি মামলা রয়েছে।

মামলার আদেশে আদালত জানান, ন্যাশনাল ব্যাংকের করা মামলার আসামি জহির আহমেদ রতন দেশের একজন শীর্ষ ঋণখেলাপি। এই জারি মামলাসহ অন্যান্য মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করেনি নূরজাহান গ্রুপ। আদালত আরও জানান, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা বর্তমানে কানাডায় বসবাস করেন। এমডি গ্রেপ্তার এড়াতে বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। তিনি যদি দেশ ত্যাগ করতে পারেন, তাহলে একাধিক ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

আদালত আরও জানায়, আসামির গৃহীত ঋণের বিপরীতে কোনো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক না থাকায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যুর তিন মাস অতিবাহিত হলেও ব্যাংকের কোনো টাকা পরিশোধ না করে তিনি পলাতক রয়েছেন। আদালতের জুডিশিয়াল রেকর্ড অনুযায়ী, জহির আহমেদের বিরুদ্ধে এই আদালতে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা ১৫টির বেশি। তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দাবিকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকার বেশি। কোনো মামলায় টাকা পরিশোধের সদিচ্ছার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

২০১৯ মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সুবিধাও নেয়নি গ্রুপটি। সার্বিক বিবেচনায় জহির আহমেদ রতন একজন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে আদালতের কাছে প্রমাণিত। স্ত্রী-সন্তান কানাডায় বসবাস করায় প্রতীয়মান হয়, রতন অর্থ পাচারের সঙ্গেও জড়িত। বাংলাদেশি অর্থ পাচারকারী ও ঋণখেলাপিরা কানাডায় কথিত বেগমপাড়ায় আয়েশি জীবনযাপন করছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

এই আদালতে বিচারাধীন অনেক মামলায় আসামিরা অর্থপাচার করে দেশ ত্যাগ করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের টাকা আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খেলাপি ঋণের ভারে দেশের ব্যাংক খাত ধুঁকছে, যার সরাসরি বিরূপ প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর। জহির আহমেদ রতন ও তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম পাওনা চার হাজার কোটি টাকা।

আসামি, তার মা ও বাবা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আদেশের কপি অতিরিক্ত আইজিপি, বিশেষ শাখা, বাংলাদেশ পুলিশ এবং অফিসার ইনচার্জ বিশেষ শাখা, বাংলাদেশ পুলিশ, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বরাবর পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকা ঋণ নিলেও এখন অনেক ব্যবসায়ীকে খুঁজে পাচ্ছে না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। কারখানায় তালা ঝুলিয়ে মোবাইল ফোনও বন্ধ রাখছেন অনেকে। আত্মগোপনে থেকে কেউ কেউ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন প্রতিনিধি পাঠিয়ে। নোটিস দিয়েও যাদের দেখা মিলছে না, সেসব ঋণখেলাপি ব্যবসায়ীর বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তুলতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হচ্ছে।

এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও অনেক ব্যবসায়ীর সম্পদ নিলামে ওঠে না। নিলাম ঠেকাতে তারা ব্যাংক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ফেলেন। আবার কেউ উচ্চ আদালতে গিয়ে নিয়ে আসেন স্থগিতাদেশ। কারও কারও সম্পদ নিলামে উঠলেও সেটি বিক্রি হয় না। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নিলাম নিয়ে ব্যাংক-ব্যবসায়ীর এমন খেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো ব্যাংক খাত। শিগগির তাদের বিরুদ্ধে কঠের ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।