ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার কামারদের জীবিকায় কভিড-১৯-এর প্রভাব পড়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে কামারপাড়ায় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতুড়ির টুং টাং শব্দে কর্মমুখর থাকে। তবে এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। আসন্ন ঈদ ঘিরে কর্মব্যস্ততা নেই ফটিকছড়ির কামারগলিতে। নেই ক্রেতার চাপ, কমেছে আয়।
সরেজমিনে উপজেলার বিবিরহাট কামার গলিতে গিয়ে দেখা যায়, কামাররা অলস সময় পার করছেন। অতীতে ঈদে তাদের দম ফেলার ফুরসত থাকত না। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। কামার পল্লিতে নেই তেমন সাড়া শব্দ। সব ব্যবসায়ীরা যেন ঝিমিয়ে পড়েছেন।
একই চিত্র ভুজপুর কাজিরহাট কামারগলিরও সেখানেও নেই আগের মতো কাজের ব্যস্ততা। ক্রেতাদের তেমন চাপ না থাকায় সংসার চালাতেও কষ্ট হচ্ছে তাদের। দুই একজন ক্রেতা এলেও তারা পুরোনো ছুরি বা চাকু মেরামত করতে আসছেন।
জানা গেছে, উপজেলা সদরের বিবিরহাট বাজারের বর্তমান দুই নম্বর সড়ক এক সময় কামারগলি নামে পরিচিত ছিল। পুরো সড়কের দুই পাশে প্রায় ১০০টি কামারশালা ছিল। কিন্তু প্রযুক্তির কারণে বিলুপ্ত হতে চলেছে এ পেশা। অত্যাধুনিক মেশিনে তৈরি নতুন ডিজাইনের দা-ছুরি বাজারজাতের কারণে চাহিদা কমে হাতে তৈরি পণ্যের।
বিবিরহাট কামারগলির প্রিয়তোষ কর্মকার জানান, অন্য যে কোনো কোরবানির ঈদে দা, ছুরি, বটি তৈরি ও শান দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতাম। দিনে আয় হতো পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। আর এখন কভিডের কারণে ব্যবসা নেই।
ভুজপুর কাজিরহাট বাজারের রনজয় দে জানান, অন্য বছর রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করেও কুলাতে পারতাম না। কিন্তু চলতি বছর সেই তুলনায় কাজ নেই বললে চলে।
তিনি আরও জানান, কামারদের প্রয়োজনীয় জ্বালানি কয়লার দাম বেড়েছে। বেড়েছে লোহার দামও। লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সে তুলনায় কামারদের মজুরি বাড়েনি। ফলে কামার সম্প্রদায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে পৈতৃক পেশা পরিবর্তন করছেন।
এছাড়া এখন মেশিনে দা-ছুরি উৎপাদন, প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, লোহার দাম বেড়ে যাওয়া, নিজেদের পুঁজি ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ পেশার অনেক শিল্পী ও কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়ছেন।
প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে কাঁচামালের সহনীয় মূল্য ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করেন তারা।