রুপম আচার্য্য, মৌলভীবাজার: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বৈচিত্র্যে ভরা সবুজের সমারোহে পরিপূর্ণ চায়ের দেশ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। ঈদের ছুটিকে আনন্দময় করে তোলার জন্য এ উপজেলায় রয়েছে বহু দর্শনীয় স্থান। এবার ঈদকে সামনে রেখে দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটক বরণে ব্যবসায়ীরা হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ ও রিসোর্টগুলোকে অপরূপ সাজে সজ্জিত করে বিশাল প্রস্তুত করে রেখেছেন। কিন্তু এই বিশাল প্রস্তুতি থাকার পরও পর্যটকরা নানা ধরনের কারণে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। রিসোর্টগুলোয় বুকিং দিয়ে তা আবার বাতিল করা হচ্ছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকিং না থাকায় হতাশ পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
তবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর এ উপজেলার হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজগুলোয় যেখানে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ আগাম বুকিং হয়, এ বছর সেখানে আগাম বুকিং ৩০ শতাংশ। গতবছর অনেক রিসোর্টেই পর্যটক প্রচুর থাকার কারণে ঈদের কোনো প্যাকেজ দিতে হয়নি। এ বছর ঈদে পর্যটক কম থাকার কারণে অনেক হোটেল রিসোর্ট প্যাকেজ দিচ্ছে। তবে কোনো কোনো রিসোর্টে ৫০ শতাংশ গেস্ট, কোনো হোটেল-রিসোর্টে ৩০ শতাংশ, কোন রিসোর্টে ৪০ বা ৭০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। তবে হোটেল-রিসোর্ট মালিকরা জানিয়েছেন, আশানুরূপ পর্যটক নেই এ ঈদে।
ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড তাপস দাশ বলেন, আমরা বহুদিন থেকেই এ শিল্পে কাজ করছি, কিন্ত করোনায় যেভাবে পর্যটনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তারপর শুধুই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা। কিন্তু এরই মধ্যে ট্যুরিস্ট গাইড অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। আর ঈদের ভরা মৌসুমে পর্যটকশূন্য হচ্ছে এখানকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। আমরা এর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। ১৯৯৬ সালের পর থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায় এ উপজেলায়। কিন্তু দীর্ঘদিন পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না হওয়া এবং নানা ধরনের জটিলতায় এখানে আসতে পর্যটকরা উৎসাহ হারাচ্ছেন।
হোটেল গ্রীনভিউয়ের পরিচালক মো. মিছবা উদ্দিন বলেন, আমরা যারা পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করেছি, আমাদের অনেকেরই ব্যাংক লোন রয়েছে। কিন্তু এখানকার পর্যটন শিল্পে পর্যটকদের আগ্রহ যেভাবে হারাচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটাই আমাদের চিন্তার কারণ। দেশের প্রশাসন আর সরকার যদি এই শিল্পের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে, এই শিল্পকেন্দ্রিক স্থানগুলোকে ঢেলে সাজানো না হয়, তাহলে এই জেলায় পর্যটনশিল্প স্থবির হয়ে পড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে এখানকার শত শত ব্যবসায়ীরা আর সরকার হারাবে রাজস্ব।
পর্যটনসেবা সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক ও গ্রিনলিফ গেস্ট হাউসের স্বত্বাধিকারী এস কে দাশ সুমন বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৫৯টি হোটেল রিসোর্টে বুকিং নেই বললেই চলে। ৩০ শতাংশ বুকিংও কনফার্ম হয়নি। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অতিরিক্ত গরমে পর্যটকরা বেড়াতে আসতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে পর্যটনে নতুন নতুন সংযোজন কিংবা সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না হওয়াও একটি বড় কারণ।
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের জিএম আরমান খান বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ঈদে পর্যটকের সাড়া একটু কম রয়েছে। তবে খুব যে কম তাও নয়, আবার খুব যে বেশি তাও নয়; মোটামুটি ভালো। ঈদের পরে এসএসসি পরীক্ষা থাকার কারণে বেশিরভাগ পর্যটক আসছে না। আরও দুদিন আছে, দেখা যাক আশা করি ভালো হতে পারে।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সহসভাপতি সেলিম আহমেদ মঙ্গলবার বলেন, ‘পর্যটন কেন্দ্রে ঈদের প্রস্তুতি ভালো, তবে গেস্টের অবস্থা ভালো নয়। তাছাড়া বুকিং দিয়ে তা আবার বাতিল করে দিচ্ছেন পর্যটকেরা। গরমের কারণে আমার এ পর্যন্ত বড় তিনটা বুকিং বাতিল হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩০ শতাংশ বুকিংও নেই এখন। গতবছর এই সময় সব হোটেল বুকিং হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এবার সে অবস্থা নেই। অন্য সময়ে ১৫ রোজার মধ্যেই ৮০ শতাংশ বুকিং হয়ে যায়। এ বছর ৪০ শতাংশ বুকিং হয়ে তার মধ্যে ১০ শতাংশই বাতিল হয়েছে। তার একটাই কারণ গরমে মানুষ বের হতে সাহস পাচ্ছে না। তিন থেকে চারটা রুম বুকিং দিয়ে পরে বলছে, এখন আসবে না পরে আসবে। গতবছর রোজার ঈদে তিন দিনে আমাদের রিসোর্টে ১০০ শতাংশ গেস্ট ছিল বলে তিনি জানান।
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের ওসি প্রদীপ কুমার চক্রবতী নিরাপত্তার বিষয়ে বলেন, ঈদে মৌলভীবাজার জেলায় একটা বিশালসংখ্যক পর্যটক বেড়াতে আসেন, তাই পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে একটি কুইক রেসপন্স টিম তৈরি করা হয়েছে, সেই সঙ্গে বাদ দেয়া হয়েছে কর্মকর্তাদের ছুটি। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পর্যটক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কাজ করছি, সেই সঙ্গে ঈদের জন্য রয়েছে আমাদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রস্তুতি।