নেই পোস্টার ও ক্যাম্পেইন অফিস নির্বাচনী প্রচারে পিছিয়ে বিএনপি

হামিদুর রহমান: ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনসংযোগ ও প্রচার সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। যদিও ১ ফেব্রুয়ারির ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা রয়েছেন স্বস্তিতে। তবে নানা শঙ্কায় ভুগছে বিরোধী দল তথা বিএনপি প্রার্থীরা।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার দুই সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পোস্টারে ঢাকা নগরী ছেয়ে গেলেও বিএনপি প্রার্থীদের পোস্টার অনেকাংশই কম। এমনকি কিছু কিছু এলাকায় বিএনপি প্রার্থীদের পোস্টার লাগানো হলেও তা ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া কোনো এলাকাতেই নির্বাচনী ক্যাম্পেইন অফিস করতে দেওয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি মাইকে প্রচারণা চালাতেও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বিএনপি প্রার্থীরা। এরপরও ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারবে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

এদিকে নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। জানতে চাইলে শেয়ার বিজকে তিনি বলেন, ‘এতদিন বিএনপির প্রার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হতো। এখন মাইক কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। পোস্টার না লাগাতে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। হামলা করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা ইসিকে বলতে চাই মাত্র কয়েকদিন বাকি। এই সময়ে যেন সব প্রার্থী সমানভাবে প্রচারণা চালাতে পারে সেই ব্যবস্থা করুন।’

যদিও ক্ষমতাসীনদের অভিমত, ভোটকে কেন্দ্র করে দুই সিটির নাগরিকদের মধ্যে এখনই সৃষ্টি হয়েছে উৎসবের আমেজ। সুষ্ঠু পরিবেশে সব দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নির্বাচনী বিতর্ক এড়াতে একটি স্বস্তিদায়ক সমাধান খুঁজছেন তারা। এ লক্ষ্যে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে দলের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

সরকার পরাজয়ের ভয়ে প্রচারণা ঠেকানোসহ হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে শেয়ার বিজকে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় তখন আমি ছাত্র। ওই সময় আমার সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস দেয়। ২০১৮ সালে যখন আমি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য দেশে এলাম, মনোনয়ন জমা দিলাম তখন দুদক থেকে তড়িঘড়ি করে চার্জশিট তৈরি করে। তারপর থেকে হিয়ারিং চলছে।’

ইশরাক বলেন, ‘সরকার যত চেষ্টা করুক নির্বাচনী প্রচারণায় এটার প্রভাব পড়বে না। এতে কিছুই যায় আসে না। এগুলো মানুষ বোঝে, মানুষ বুঝেছে যে, গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাতে সরকার ভীত। হারের ভয়ে যত রকমের কূটকৌশল প্রয়োগ করছে। আমি এসবের তোয়াক্কা করি না। এগুলো জেনেই আমি রাজনীতিতে এসেছি। আমি বিচলিত হচ্ছি না।’

এদিকে নির্বাচনে হার-জিতের রেস থেকে বেরিয়ে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ভোট ঢাকাবাসী উপহার পাবেন বলে প্রত্যাশা করছে ক্ষমতাসীনরা। এমনকি এ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হেরে গেলেও সরকারি দলের তেমন ক্ষতি হবে না। বরং জনগণের কাছে আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটা আরও সুদৃঢ় হবে। তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কথায় আশ্বস্ত হতে পারছে না বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, ইভিএম নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে।

এছাড়া প্রচারণা শুরুর আগেই পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু করেছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, ওয়ার্ডভিত্তিক তাদের তালিকাও করা হচ্ছে। এ সবকিছুই প্রমাণ করে ভোট সুষ্ঠু হবে না।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও দলটির ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সমন্বয়ক তোফায়েল আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটির ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবেন।’

ঢাকা উত্তর সিটির বিএনপির প্রচার কমিটির প্রধান দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘বিভিন্ন মহল থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নেওয়ার জন্য। আমরা পোস্টার লাগানো ও লিফলেট বিতরণ করার জন্য ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন করেছি। কিন্তু তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আবার কোথাও পোস্টার লাগানো হলে ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এখন আমরা সশরীরে ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। এতে আমাদের প্রার্থীরা ভালো সাড়া পাচ্ছেন। গত ১০ জানুয়ারি থেকে ঢাকা সিটি নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়। এই সাত দিনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা একাধিক অভিযোগ দিয়েছে রিটার্নিং অফিসারের কাছে।’

এদিকে মাঠে নির্বাচনী প্রচারণায় পিছিয়ে থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা। ফেসবুকে চার মেয়র প্রার্থীর প্রচারণার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ঢাকা উত্তরের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আওয়াল। আর সবচেয়ে পিছিয়ে আছেন ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের ফেসবুক ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ দুই হাজার। আতিকুল ইসলাম তার সব কর্মসূচি ফেসবুক লাইভে প্রচার করছেন। অন্যদিকে একই আসনের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়ালের ফেসবুক ফলোয়ার প্রায় সাত লাখ ১২ হাজার। তাবিথ আওয়ালও তার সব প্রচারণা ফেসবুক লাইভে প্রচার করছেন। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের ফলোয়ার সংখ্যা দুই লাখ ছয় হাজার। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাকের ফলোয়ার সংখ্যা চার লাখ ২৪ হাজার।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০