Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:31 am

নেই সহায়ক জনবল দক্ষতা কমছে আইএমইডির

 

মাসুম বিল্লাহ: সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজ সুচারুভাবে সম্পন্নের জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও), কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহায়ক থাকেন। কর্মকর্তা বদলি হলে তারা সব নথি সংরক্ষণ করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। বিভাগটিতে এসব সহায়ক জনবল না থাকায় ‘ইনস্টিটিউশনাল মেমোরি’ সংরক্ষণ হচ্ছে না। ফলে কর্মকর্তা বদলির পর সংশ্লিষ্ট ডেস্কের আগের রেকর্ড খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে; যা উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন ও মূল্যায়ন কার্যক্রমের দক্ষতা কমাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের কেনাকাটার নীতিগত নানা বিষয় সমন্বয়, গৃহীত প্রকল্পের কার্যক্রম মূল্যায়ন এবং একটি প্রকল্প সম্পাদনের ফলে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থায় কী ধরনের গুণগত পরিবর্তন ঘটে সেসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে আইএমইডি। এসব কাজ সম্পাদনে বর্তমানে বিভাগটির অধীনে ১০টি সেক্টর রয়েছে। এগুলো হলো কৃষি ও পানিসম্পদ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও গৃহায়ন, শিল্প ও শক্তি, পরিবহন, শিক্ষা ও সামাজিক, সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ), নিবিড় পরিবীক্ষণ ও গবেষণা, মূল্যায়ন এবং সমন্বয় ও এমআইএস সেক্টর।

সমন্বয় সেক্টর ছাড়া অন্য সেক্টরগুলোর সর্বোচ্চ পদে আসীন যুগ্ম সচিব অথবা যুগ্মপ্রধান পদমর্যাদার একজন মহাপরিচালক (ডিজি)। এছাড়া প্রতিটি সেক্টরে গুরুত্বানুযায়ী এক বা একাধিক পরিচালক রয়েছেন। তারা উপ-সচিব অথবা উপ-প্রধান পদমর্যাদার। পাশাপাশি সিনিয়র সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী প্রধান সমপর্যায়ের উপপরিচালক এবং সহকারী প্রধান ও সহকারী সচিব পদমর্যাদার সহকারী পরিচালক রয়েছেন প্রতিটি সেক্টরের সাবসেক্টরগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। আর একনেক ও এনইসির সঙ্গে আইএমইডির কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন প্রধান রয়েছেন। তিনি বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা। তবে এসব সেক্টরে কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও অফিস সহায়ক নেই। ফলে এখানে সচিবালয় ও অন্যান্য সরকারি দফতরের মতো ‘ইনস্টিটিউশনাল মেমোরি’ সংরক্ষণ হচ্ছে না যথাযথভাবে। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অন্যত্র বদলি হওয়ার পর নতুন কর্মকর্তা দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন নথি সমন্বয় করতে পারেন না। কাজ বুঝতে অনেক সময় লেগে যায়। যার প্রভাব পড়ে প্রকল্প পরিদর্শন ও মূল্যায়ন কার্যক্রমে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশাসনিক কর্মকর্তার মতো সহায়ক জনবল না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে আইএমইডির ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মফিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, সরকারের অন্য দফতরের মতো আইএমইডিতে সহায়ক জনবল নিয়োগের বিষয়ে প্রস্তাব প্রস্তুতের কাজ চলছে। শিগগিরই এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হবে।

এদিকে গত ডিসেম্বরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আইএমইডির সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সহায়ক জনবল না থাকায় আইএমইডির কার্যক্রম পরিচালনায় কী ধরনের জটিলতা দেখা দিচ্ছে সে বিষয় তুলে ধরেন তৎকালীন প্রধান। তিনি উল্লেখ করেন, আইএমইডিতে শাখা পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নেই। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শাখা পর্যায়ে একজন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহায়ক আছেন। এরূপ জনবল না থাকায় কর্মকর্তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারছেন না।

জানা যায়, কর্মকর্তাকেই কম্পিউটার অপারেটর ও ফাইল সংরক্ষণের কাজ করতে হয়। তার ওপর প্রতিবছর উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) কলেবর বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে জনবল না থাকায় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারছে না আইএমইডি।

এদিকে আইএমইডির সেক্টরগুলো সম্প্রতি পুনর্গঠন করা হয়েছে। এসব সেক্টরের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য বিদ্যমান জনবলের পাশাপাশি আরও ৬৯টি পদ অনুমোদন করা হয়েছে। সেগুলো পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ৬৯ জন জনবলের মধ্যে ৩৮টি পদ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির। বাকি ৩১টি প্রথম শ্রেণির পদ। এর মধ্যে ছয়টি পদ বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২৫টি পদের মধ্যে তিনটি ডিজি, পাঁচটি পরিচালক, সাতটি উপপরিচালক ও ১০টি সহকারী পরিচালকের পদ রয়েছে। তবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যেহেতু বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের সংশ্লিষ্টতা বেশি, তাই প্রথম শ্রেণির পদগুলোর মধ্যে এ ক্যাডারের জন্য নির্দিষ্ট করে পদ উল্লেখ না থাকায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তারা ধারণা করছেন, ইকোনমিক ক্যাডারের জন্য পদ নির্দিষ্টকরণ না করায় প্রথম শ্রেণির পদগুলোর বেশিরভাগই প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দিয়েই পূরণ করা হবে।