হামিদুর রহমান: দ্রুত অনলাইন সেবা পাওয়ার পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় দেশে ফোরজি হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারী গ্রাহক বাড়ছে। বর্তমানে দেশে ফোরজি হ্যান্ডসেট রয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
মোবাইল অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)-এর তথ্যমতে, “দেশে বর্তমানে ফোরজি হ্যান্ডসেট ৪০ শতাংশ। থ্রিজি হ্যান্ডসেট রয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। তবে নতুন করে থ্রিজি হ্যান্ডসেট বাড়ার সুযোগ নেই। কেননা হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন থ্রিজি হ্যান্ডসেট তৈরি থেকে দূরে সরে এসেছে। আর মোবাইল অপারেটরগুলো একটা সময় বাদে থ্রিজি সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে।”
মোবাইল ফোন উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিএ) জানায়, ‘দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন করে থ্রিজি হ্যান্ডসেট উৎপাদন করছে না বললেই চলে। কিছু লোকাল প্রতিষ্ঠান বাটন ফোন তৈরি করলেও গ্রাহকদের সর্বোচ্চ দৃষ্টি এখন ফোরজি বা ফাইভজি হ্যান্ডসেটে।’
তারা আরও জানায়, ‘দেশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও এখন ফোরজি সেবা পৌঁছে গেছে। অন্যদিকে থ্রিজির মূল্যের এখন ফোরজি হ্যান্ডসেট পাওয়া যাচ্ছে। আবার সেবার দিকেও ফোরজি অনেক আপডেট ও দ্রুতগতি সার্ভিস প্রদান করায় গ্রাহকরাও এখন ফোরজি হ্যান্ডসেট সংগ্রহ করছে।’
উল্লেখ্য, একজন গ্রাহক থ্রিজি সেবায় সেকেন্ডে দুই এমবিপিএস গতি পান। সেখানে ফোরজিতে সর্বনি¤œ গতি সাত এমবিপিএস। ইতোমধ্যে দেশের প্রায় সবগুলো টাওয়ারকে ফোরজিতে রূপান্তর করা হয়েছে।
মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর তথ্যমতে, দেশের ফোরজি কাভারেজ প্রায় শতভাগ। দেশের বহুজাতিক মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের দেশব্যাপী ফোরজি সাইট প্রায় ১৮ হাজার ৭০০ টি, রবি আজার ফোরজি সাইট প্রায় ১৫ হাজার, বাংলালিংকের ফোরজি সাইট রয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৫০০ টির মতো। তবে ফোরজি কাভারেজ বরাবরই শীর্ষে গ্রামীণফোন।
বিটিআরসি’র সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী গ্রাহক প্রায় ১৮ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে গ্রামীণ ফোনের গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৮ কোটি ৪২ লাখ ৭০ হাজার, রবি আজিয়াটার গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৪০ লাখ, বাংলালিংকের গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার, টেলিটকের গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৬৮ লাখ ৬০ হাজার। আর দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১২ কোটি ৪২ লাখ। এর মধ্যে মোবাইল ফোন অপারেটরের প্রায় ১১ কোটি ৩২ লাখ, আইএসপি ও পিএসটিএন প্রায় ১ কোটি ৯ লাখ ৯০ হাজার
বাজারে ফোন কিনতে আসা কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, ‘সারাদেশে মানুষের হাতে হাতে এখন ফোরজি ফোন। মার্কেটে এখন থ্রিজি ফোন কম পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া থ্রিজি ও ফোরজি হ্যান্ডসেটের দামও সমান।’
বসুন্ধরা সিটিতে ফোন কিনতে আসা ঢাকা কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ আল মাসুদ জানায়, ‘দেশে এখন ফাইভজি চালু হতে যাচ্ছে। ফোরজি এখন দেশব্যাপী। থ্রিজি ও ফোরজি প্রায় একই দাম। আবার কিছু দিন আগে একটা নিউজে দেখলাম অপারেটরগুলো থ্রিজি সেবা বন্ধ করে দেবে, এসব কিছু বিবেচনা করেই ফোরজি ফোন কিনার প্ল্যান করেছি।’
একই মতামত ব্যক্ত করেছেন আরেক গ্রাহক খান আমিন। পেশায় ব্যাংকার। তিনি বলেন, ‘ফোরজি আর থ্রিজি সেবার মানে অনেক তফাৎ। মাঝে মাঝে ফোরজিতেই নেটওয়ার্ক সেøা কাজ করে। আর এখন সবার হাতে ফোরজি ফোন। আর দেশের অনেক সেবা এখন ডিজিটাইজ করা হয়েছে। ফোরজি ফোন এখন মানুষ প্রয়োজনেই ব্যবহার করছে। তবে আমি সব সময় সঙ্গে একটা বাটন ফোন ব্যবহার করি ব্যাকআপের জন্য। অনেক সময় ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যায়।’
বাজারে মোবাইল ফোন বিক্রেতারা বলেন, ‘এখন ক্রেতা এসে ফাইভজি ফোন চায়। থ্রিজি এখন আর কেউ চায় না। আগের থ্রিজি ফোনগুলো এখন থাকলে আর বিক্রি করতে পারতাম না।