নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ থেকে কখনও অটোমোবাইল সামগ্রী বিদেশে রফতানি হয়নি। গতকাল দেশ থেকে প্রথমবারের মতো নেপালে রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের প্রস্তুত করা মোটরসাইকেল রফতানির শুরু হলো। যার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করলো ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল।
এ উপলক্ষে ভালুকায় রানার কারখানায় রফতানির শুভসূচনা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. মো. আমান উল্লাহ, রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান, ভাইস চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মুকেশ শর্মা, নেপালের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ধন বাহাদুর অলি, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেট্রিক্স মোটো করপোরেশনের দিলীপ কুমার কার্নাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন ঘোষণার পরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ ধরনের দেশি শিল্প প্রসারে সহায়তা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে আসন্ন বাজেটে ওযুধশিল্পকে আমাদের ক্যাশ ইনসেনটিভ (নগদ সহায়তা) দেওয়ার চিন্তা রয়েছে। এছাড়া আমরা পাট, চামড়া, প্লাস্টিকের মতো বেশ কিছু দেশি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ক্যাশ ইনসেনটিভ দিচ্ছি। এরপরের বাজেটে (২০১৭-১৮) মোটরবাইক খাতকে সহায়তার দেওয়ার জন্য আমি সুপারিশ করব।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রানার প্রথমবারের মতো মোটরসাইকেল বিদেশে রফতানি করছে, যা বাংলাদেশের জন্য গর্বের। আমরা বরাবরই বলে আসছি রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের কথা। এটি একটি নতুন বহুমুখী পণ্যের তালিকায় যুক্ত হলো। ফলে বাংলাদেশের রফতানি ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক।
রানারের কারখানাটি পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমি বাংলাদেশের একটি অন্যতম দেশি মোটরসাইকেল শিল্প-কারখানা দেখলাম। যেখানে রানার ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের মোটরসাইকেল তৈরি করা হচ্ছে। রানার অটোমোবাইলসে উৎপাদন এবং রফতানির মধ্য দিয়ে বিশ্ব প্রযুক্তির শীর্ষ দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত হবে।
অন্যদিকে রানার চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান মোটরসাইকেল উৎপাদন ও রফতানি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য অবহিত করে বলেন, এ কারখানায় দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা ৫০০ মোটরসাইকেল। তবে তা ২০১৮ সালের মধ্যে এক হাজারে উন্নীতকরণের কার্যক্রম চলছে। আর এ বছরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিসম্পন্ন উচ্চক্ষমতার বিখ্যাত ইউএম-রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারে সরবরাহ শুরু হবে।
নেপালে রফতানি বিষয়ে এ উদ্যোক্তা বলেন, নেপালে আমাদের আজকের এ মোটরসাইকেল রফতানির মাধ্যমে বিশ্ববাজারে রফতানির পথ প্রশস্ত হচ্ছে, তবে সরকারের কাছ থেকে সহায়তা পেলে বিশ্ববাজারে রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল আধিপত্য স্থাপনে সক্ষম হবে।
সরকারের কাছে অটোমোবাইলসের নীতিমালা দাবি করে হাফিজুর রহমান বলেন, অটোমোবাইলসের কোনো নীতিমালা নেই। তাই একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দরকার। এতে উৎপাদকরা সহায়তা পাবেন। অন্যদিকে দেশে এ নীতিমালার মাধ্যমে মোটরসাইকেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে উৎপাদন করতে বাধ্য করতে হবে। তাহলে আমাদের দেশের মানুষ কম মূল্যে মোটরসাইকেল কিনতে পারবে।
দেশের পুঁজিবাজারে আসার আগেই মোটরসাইকেল নির্মাতা কোম্পানি রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করছে। রানার বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলতে চায়। ইতোমধ্যে ১৯ অক্টোবর সোনারগাঁও হোটেলে রোডশো সম্পন্ন করেছে কোম্পানিটি। বর্তমানে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৯৪ কোটি টাকা।
এদিকে গতকাল উদ্বোধনের পর নেপালের পথে যাত্রা করলো রানার গ্রুপের মোটরবাইক বহর। সে সময় ভালুকা কারখানা থেকে প্রথম ধাপে ৯টি কাভার্ড ভ্যান নেপালের পথে রওনা হয়। নেপালের পথে ‘মেড ইন বাংলাদেশ বহর’ চীনের ডায়াং মোটরসাইকেল বিপণনের মাধ্যমে রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড যাত্রা শুরু করে ২০০০ সালে। রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড ডায়াং মোটরসাইকেল আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
আর ২০০৭ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় স্থাপন করা হয় মোটরবাইকের কম্পোনেন্টস তৈরির কারখানা। রানার ওয়েল্ডিং, পেইন্টিং, অ্যাসেম্বলিং, টেস্টিং, চেসিস, রিয়ার ফোরক, ফুয়েল ট্যাংক, মেইন স্ট্যান্ড, সাইড স্ট্যান্ড, ফুট পিগ এবং ইঞ্জিন তৈরির মাধ্যমে মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী। ২০১২ সালে পুরোদমে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে রানার গ্রুপ। এসব যন্ত্রাংশ রং করার জন্য অত্যাধুনিক পেইন্ট শপ স্থাপন করেছে তারা।
Add Comment