Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 7:39 pm

নেপালে ২০২৩ সালেও অব্যাহত থাকবে মূল্যস্ফীতি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: নেপালে মূল্যস্ফীতি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বরং পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নেপাল রাষ্ট্র ব্যাংক চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের মুদ্রানীতি পর্যালোচনা করে বলেছে, আসছে মাসগুলোয় উচ্চমূল্য হার অব্যাহত থাকতে পারে। খবর: দ্য কাঠমান্ডু টাইমস।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থনৈতিক গবেষণা বিভাগের প্রধান প্রকাশ কুমার শ্রেষ্ঠ বলেন, মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠতে পারে এবং তা প্রায় ছয় মাস স্থায়ী হতে পারে। খাদ্য, জ্বালানি ও পরিবহন খাতের ব্যয় বেড়ে গেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটির সব পণ্যের দাম ক্রমেই বাড়ছে। যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড বেড়ে যায়। তেলের উচ্চমূল্যের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে, বিশেষ করে পরিবহন খাতের অত্যধিক খরচ সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

নেপালের মতো আমদানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত অক্টোবরে রেকর্ড ৮ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি বাড়ে, যা গত বছরের একই সময় ছিল ৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০২১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশে নেমে আসে। বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে মূল্যস্ফীতি দীর্ঘদিন স্থায়ী হবে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রকাশ কুমার বলেন, রুপির বিপরীতে শক্তিশালী হচ্ছে ডলার। বর্তমানে প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ১৩১ রুপি। আমদানি পর্যায়ে ডলারের দাম বেড়েছে। সবমিলিয়ে ডলারের বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়া সত্ত্বেও দেশীয় বাজারে জ্বালানির দাম কমেনি।

অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এমনকি কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বিষয়টি উল্লেখই করেনি বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

প্রকাশ কুমার বলেন, নেপাল অয়েল করপোরেশন যদি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে তেলের দাম কমায় তাহলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে না। সবাই জানে, সস্তা জ্বালানি তেল পরিবহন ও কারখানাগুলোর খরচ কমাবে, যা খুচরা মূল্যে প্রভাব ফেলবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা নেপাল অয়েল তেলের একচেটিয়া উচ্চমূল্য বজায় রেখেছে। ব্যয়বহুল জ্বালানি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নেপালের নাগরিকদের কষ্ট বেড়েছে। সংস্থা জানিয়েছে, অতীতের ব্যাপক লোকসান ও সরবরাহ কমে যাওয়া রোধের জন্য জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পরিকল্পনা নেই। বর্তমানে সংস্থার মোট ঋণের পরিমাণ ২৯ দশমিক ১১ বিলিয়ন (দুই হাজার ৯১১ কোটি) ডলার। ডলারের শক্তিশালী অবস্থান আমদানি খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে নেপাল অয়েল।

প্রসঙ্গত, এলপিজি বা রান্নার গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। বর্তমানে একটি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ রুপিতে। প্রকাশ কুমার বলেন, ভারতে মূল্যস্ফীতি সাত শতাংশ থেকে কমে ছয় শতাংশে দাঁড়িয়েছে। উš§ুক্ত সীমান্তের কারণে তাদের মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধি ও কমার প্রভাব পড়ছে আমাদের বাজারে। ভোক্তা অধিকার কর্মীরা বলেন, সরকার মূল্যস্ফীতির সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। তাদের তথ্যের সঙ্গে মূল্যস্ফীতির তথ্যের মিল নেই।

অর্থনীতিবিদ জগদীশ চন্দ্র পোখরেল বলেন, ছয় মাসের মূল্যস্ফীতি সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলে। এ কারণে উৎপাদন ও আমদানি এবং বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ কমে। প্রায় এক বছর ধরে দেশে মূল্যস্ফীতি চলছে এবং এ পরিস্থিতি অর্থনীতির জন্য মোটেও সুখকর নয়।

তিনি আরও বলেন, পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অল্প আয়ের মানুষ কষ্টে পড়েছে। এ বিষয়ে সরকার মোটেও বিব্রত নয়। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, যা আমাদের মতো দেশের জন্য ক্ষতিকর।