নেপাল থেকে সাড়ে ৬ সেন্টে বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ (হাইড্রো পাওয়ার) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির সঙ্গে এ নিয়ে বেশকিছু দিন ধরেই দরকষাকষি চলছে। এক্ষেত্রে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম পড়বে সাড়ে ৬ সেন্ট বা ৭ টাকা ১৫ পয়সা (১ ডলার = ১১০ টাকা)। তবে এর মধ্যে সঞ্চালন ও ভারতের আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য চার্জ অন্তর্ভুক্ত নেই। সে ব্যয় বাংলাদেশকে পৃথকভাবে বহন করতে হবে।

বিদ্যুৎ আমদানি-রপ্তানির দর নির্ধারণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একাধিক দরকষাকষির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ গত ২২ ফেব্রুয়ারি নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি (এনইএ) জানিয়েছিল, একটি গ্রহণযোগ্য দর নির্ধারণে এনইএ এবং বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) দরকষাকষি করছে। সে সময় বিপিডিবি জানায়, তারা জলবিদ্যুতের জন্য ৫ সেন্ট দর প্রস্তাব করলেও নেপাল ৭ সেন্ট চাইছে। অবশেষে তা চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন।

তিনি বলেন, এনইএর নির্বাহী পরিচালক কুল মান ঘিসিং সম্প্রতি বাংলাদেশ সফলে এসেছিলেন। সে সময় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিদ্যুৎ আমদানির দর নির্ধারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। তবে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করতে হয়। এরপর বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হবে।

চুক্তির আওতায় নেপালের ত্রিশুলী প্রকল্প থেকে ২৪ মেগাওয়াট এবং অন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৬ মেগাওয়াটসহ মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। এই বিদ্যুৎ ভারতের বহরমপুর সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ভেড়ামারায় বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন করা হবে। আগামী ১৫ জুনের আগেই বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আগামী অক্টোবরের আগে নেপালের বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনাও কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মোহাম্মদ হোসেইন জানান, নেপালের জলবিদ্যুৎ তুলনামূলক সস্তা। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের অর্ধেকরও কম। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কিনতে যেখানে ১২-১৪ টাকা খরচ লাগে, সেখানে নেপাল থেকে এই জলবিদ্যুৎ অর্ধেক দাম কেনা যাবে।

বিপিডিবি সূত্র জানায়, ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হলে দুদিক থেকেই লাভবান হবে বাংলাদেশ। যেমন শীতের যে সময়ে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়, তখন নেপালে থাকে শুষ্ক মৌসুম। দেশটির তখন বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা থাকে। ওই সময় নেপাল চাইলে বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারবে।

এর আগে এনইএ’র ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রদীপ কুমার থিকে নেপালের প্রস্তাবিত দামকে গত বছর মধ্যমেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির জন্য একটি ভারতীয় কোম্পানি যে মূল্য পরিশোধ করেছিল তার সঙ্গে তুলনা করেন। গত বছরের মে মাসে এনইএ বিদ্যুতের জন্য ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম (এনভিভিএন) লিমিটেড ইন্ডিয়ার সঙ্গে প্রতি ইউনিট সোয়া ৫ ভারতীয় রুপিতে (প্রায় ৭ টাকা) পাঁচ বছরের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে এ চুক্তিতে ট্রান্সমিশন এবং ট্রেড মার্জিন সম্পর্কিত কোনো অতিরিক্ত ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, নেপাল থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি করা বিদ্যুৎ, নেপাল-ভারত ধলকেবার-মুজফফরপুর ক্রস বর্ডার ট্রান্সমিশন লাইন এবং ভারত-বাংলাদেশ বড়পুর-ভেড়ামারা ক্রস বর্ডার ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে পরিবহন করা হবে। এদিকে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির সহায়তা দিতে সাময়িকভাবে সম্মত হয়েছে ভারত। গত বছর দেশটির প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালের ভারত সফরের সময় ভারত তার বিদ্যমান ট্রান্সমিশন অবকাঠামো ব্যবহার করে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০