আব্দুল কবীর ফারহান, নোবিপ্রবি: ২০২০ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতি মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখে দুই মাসের বেশি সময়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে টানা ৭৬ দিন দীর্ঘায়িত করা হয় অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাক দেয়া ওই আন্দোলন। সে সময় শিক্ষক নেতারা ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। বরং শিক্ষার্থীদের কাঁধেই ভারি হচ্ছে এ ক্ষতির বোঝা।
দেশে কভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হওয়ায় গত বছর ১৮ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। দীর্ঘদিনের বন্ধে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাপক ব্যাহত হয়েছে। এতে সেশনজটসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
শিক্ষার্থীদের সেই চাপ কমাতে গত বছর ২৫ জুন ইউজিসি এক ভার্চুয়াল সভায় ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের মতামতের আলোকে অনলাইন পাঠদানের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই আলোকে নোবিপ্রবি ৩০ জুন থেকে অনলাইন একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করলেও মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের’ মতো সামনে এসেছে শিক্ষকদের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ডাক। ফলে কয়েক দিন যেতে না যেতেই নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির ডাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনের সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে গত বছর ১ অক্টোবর থেকে চলতে থাকে শিক্ষকদের আন্দোলন। কোনো সুরাহা না পেয়ে টানা ৭৬ দিন আন্দোলন চালিয়ে শূন্য হাতেই আন্দোলন স্থগিত করেন নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। সেসময় দায়িত্বশীল মহল থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আশ্বাস পাওয়ার পর আন্দোলন স্থগিত করেছে বলে জানান শিক্ষক নেতারা।
ক্লাস বর্জনের সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে নানা ক্ষোভ তৈরি হলে তখন ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার কথা বলে আন্দোলন দীর্ঘায়িত করে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। শিক্ষার্থীদের মতে, এ আন্দোলনের মাধ্যমে কভিডে নানামুখী ক্ষতির সম্মুখীন শিক্ষার্থীদের আরও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইন কার্যক্রমে এগিয়ে গেলেও নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে রয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনুচ্ছিক এক শিক্ষার্থী জানান, গত বছর থার্ড ইয়ারের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করার কথা থাকলেও শিক্ষকদের আন্দোলনে দেরিতে শুরু হয় এবং প্রায় সম্পূর্ণ ক্লাস এখনও বাকি। এমনকি ওই ইয়ারের প্রথম সেমিস্টারের ক্লাসগুলোও এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে শেষ করা হয়নি। তাহলে কীভাবে পুষিয়ে দেয়া হচ্ছে? শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী এ বছর অনার্স শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা অধরা। গত ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা হবে হবে বলেও এখনও এ বিষয়ে আমার বিভাগ কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।
এফটিএনএস বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান মিশকাত বলেন, কভিডের কারণে মাস্টার্স দুই বছরেও শেষ করতে পারিনি। জব করতাম জবটাও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। গত ফেব্রুয়ারিতে এক্সাম হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। এখন আমি জবলেস, হতাশা কাজ করে অনেক।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন বলেন, যেহেতু শিক্ষকরা প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষানোর কথা বলেছেন, সেহেতু নিশ্চয়ই তারা ব্যবস্থা নেবেন। তবে চলমান ও পরবর্তী সেমিস্টারগুলোয় এর প্রভাব পড়ে। এখন যারা চতুর্থ বর্ষে আছে, তাদের ক্ষতি পোষাবে না। প্রশাসনের উচিত দ্রুত চতুর্থ বর্ষসহ সব সেমিস্টারগুলো শেষ করা।
কীভাবে ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া হবে এমন প্রশ্নে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। আটকে থাকা সেমিস্টারের পরীক্ষাগুলো পর্যায়ক্রমে দ্রুত শেষ করা হবে এবং নতুন সেমিস্টারগুলোও দ্রুত শেষ করে দেয়া হবে।