নোয়াখালীতে অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি

আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী: অবৈধ অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ছে পুরো নোয়াখালীর আনাচে-কানাচে। যেন হাত বাড়ালেই মিলছে আগ্নেয়াস্ত্র। সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রাহাজানি ও জমি দখল থেকে শুরু করে তুচ্ছ ঘটনায় ব্যবহƒত হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। প্রায় প্রতিদিনই জেলার কোথাও না কোথাও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারের খবর মিলছে। ফলে সাধারণ মানুষ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভয়ের মধ্যে সময় পার করছেন বলে জানা গেছে। তাছাড়া এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই আবদুল কাদের মীর্জা।

জানা গেছে, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের বেশিরভাগ আসছে দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে। আর তা ছোট-বড় সব সন্ত্রাসীর হাতে সহজেই চলে যাচ্ছে। পাড়া-মহল্লার উঠতি মাস্তানরাই শুধু নয়, ছিঁচকে ছিনতাইকারীরাও ব্যবহার করছে এসব অস্ত্র। তবে কারা, কীভাবে, কোথা থেকে আনছে, আর এর ক্রেতা কারাÑসে বিষয়ে সঠিক তথ্য নেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও।

অবশ্য পুলিশের হাতে এলজি ও বেশকিছু দেশীয় অস্ত্রসহ কিছু অস্ত্রধারী আটক হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, জেলার কিছু ছাত্র ও যুবরাজনীতির খাতায় নাম লেখানো একশ্রেণির কাছে অস্ত্রের চালান ও কেনাবেচার বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। এতে জেলাজুড়ে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাসহ আতঙ্ক বেড়েছে। সম্প্রতি জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল আলম মঞ্জুর ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেও গুলি করে অস্ত্রধারীরা। তবে তিনি কার্যালয়ের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

এছাড়া কয়েক মাস আগে রাতের আঁধারে পৌর মেয়র শহিদ উল্লাহ খান সোহেলের বাসভবনের সামনের গেট লক্ষ করে গুলির শব্দ শোনেন স্থানীয়রা। তাছাড়া রাতের বেলায় মেয়রের পৌর ভবন লক্ষ করে সন্ত্রাসীদের বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার দাগ আজও আছে। এর আগে নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কাজী এবিএম শাহজাহান শাহীনের লক্ষ্মীনারায়ণপুরের বাড়িতেও রাতের বেলায় গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এ সময় বাড়ির গেটে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালও ভাঙচুর করে তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শহরের কিছু যুবকের অস্ত্র কেনাবেচা করার তথ্য পুলিশের কাছেও রয়েছে। এসব অস্ত্র ক্ষমতাসীন দলের কিছু যুবকের হাতে রয়েছে, সে তথ্যও আছে। তবে অস্ত্রধারীরা ক্ষমতাসীন দলের মদতপুষ্ট হওয়ায় প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে জানা যায়। র‌্যাব সূত্র জানায়, তারাও মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে কিছু অস্ত্রধারীকে আটক করেছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে বিদেশি শর্টগান, পিস্তল, গুলি, শর্টগানের কার্তুজ, পিস্তলের ম্যাগজিন প্রভৃতি।

জেলা ডিবির ওসি কামরুজ্জামান জানান, হাতেনাতে ধৃত হলে অবৈধ অস্ত্রের চালান ও ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

এ বিষয়ে নোয়াখালীর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি কাজী এবিএম শাহজাহান বলেন, ‘বিভিন্ন সীমান্তপথে আসা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ছড়িয়ে পড়ছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। এগুলো আসার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনেরও হাত রয়েছে। জেলার কিছু রাজনৈতিক পরজীবী মানুষ এর ওপর ভর করে নিজেদের রাজনীতি চাঙা রাখতে চান। এজন্য প্রতিটি এলাকায় বিশেষ অভিযান প্রয়োজন বলে মনে করি।’

র‌্যাব-১১ লক্ষীপুর ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মো. আবু ছালেহ বলেন, ‘বিভিন্ন অপরাধের উৎস উদ্ঘাটন, অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং বিশেষ করে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’ নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্রধারী এবং অস্ত্র কেনাবেচার উৎসসহ সংঘবদ্ধ চক্রকে গ্রেপ্তারে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়া অবৈধ ছোট অস্ত্রের সরবরাহ এবং ব্যবহারকারীদের ধরতে এ জেলার বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযানের চিন্তাও রয়েছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০