শাকিল আহমেদ, নোয়াখালী: নাগরিকদের ন্যূনতম পায়ে হাঁটার ফুটপাতও নেই শহরের বেশির ভাগ অংশে। শহরের প্রধান সড়কে যৎসামান্য যেটুকু আছে সেটুকুও হকারদের দখলে। ফলে নাগরকিরা অগত্যা নামছেন সড়কে। সড়কে হাঁটারও বালাই নেই। দখলে থাকা ফুটপাত, ফুটপাতের পথচারী সড়কে আর সড়কে চাহিদার কয়েকগুণ বেশি গাড়ি। সবমিলিয়ে প্রকট যানযটে নাভিশ্বাস শহরবাসীর। বৃহত্তর নোয়াখালীতে সড়ক দখলের মচ্ছব চলছে। মাঝে মাঝেই প্রশাসনের অভিযানে উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু সকালে উচ্ছেদ করলে বিকালেই আবার দখল করে নেয় হকাররা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ফোর লেন সড়কের পাশে বড় বড় ছাতা টাঙিয়ে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ভ্রাম্যমাণ হকাররা। সড়কের পাশাপাশি ফুটপাতও তাদের দখলে। এতে করে সাধারণ মানুষের চলাচলে যেমন ব্যাঘাত ঘটছে তেমনি সড়কে যানজটও বেড়েছে ব্যাপকভাবে।
পথচারী ফাহমিদা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা ফুটপাত দিয়েও হাঁটতে পারি না, প্রতিনিয়ত আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
জামাকাপড়ের ট্রলি নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হকার জসিম বলেন, ‘আমরা রাস্তায় না বসলে খাব কী? মাঝে মাঝে পুলিশ দৌড়ানি দেয়, পরে পুলিশ চলে গেলে আবার বসি।’
জেলা শহর মাইজদী বড় মসজিদ মোড়ের ব্যবসায়ী রাসেল বলেন, ‘৪০ লাখ টাকা জামানত দিয়ে দোকান নিয়েছি, কিন্তু দোকানের সামনের সড়কে হকাররা দখল করার কারণে ক্রেতা দোকানে ঢুকতে পারে না।’
নোয়াখালী পৌর বণিক সমিতির সভাপতি সাইফ উদ্দিন সোহান হতাশ কণ্ঠে বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীরা কোটি টাকা বিনিয়োগ করে দোকান দিয়েছে অথচ এসব হকারদের দৌরাত্ম্যে তারা আজ পথে বসে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের জন্য পৌর মেয়র এবং জেলা প্রশাসকের প্রতি আহ্বান জানান।
অন্যদিকে জেলার অধিকাংশ সড়কের পাশেই অস্থায়ী সিএনজি স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। বসুরহাট, কবিরহাট, সেনবাগ, চাটখিল, সোনাইমুড়ী, চৌমুহনী, সুবর্ণচরসহ প্রত্যেক উপজেলায় একই চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া জেলা শহর মাইজদীর সোনাপুর, বড় মসজিদ মোড়, পুরোনো বাসস্ট্যান্ড, মাইজদী বাজার, সুপার মার্কেটসংলগ্ন কাউয়া রোড, প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কসহ প্রায় সব সড়কেই অস্থায়ী সিএনজি স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এতে সড়ক যানজট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা যায়, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ইন্ধনেই তারা বেপরোয়া আচরণ করছে বলে জানান সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন হকার আর সিএনজি স্ট্যান্ডের নামে চলে নীরব চাঁদাবাজি। প্রতি মাসে কোটি টাকার ওপর চাঁদা আদায় হয় এ খাতে। আর এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে একজোট হয়ে সাধারণ মানুষের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। এ বিষয়ে সিএনজি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল উদ্দিন মন্তব্য করতে রাজি হননি। টোল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আমাদের কিছু লোক কাজ করে। তাই তাদের জন্য ৫-১০ টাকা করে তোলা হয়।’
এ বিষয়ে জানতে পৌর মেয়র শহিদুল্যা খান সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে প্যানেল মেয়র রতন কৃষ্ণ পাল জানান, এ বিষয়ে পৌর মেয়রের যথেষ্ট সদিচ্ছা আছে। ঈদের পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান জোরদার করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান যথাযথ পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান দ্রুত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।