আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী: নোয়াখালীর ৯ উপজেলায় দিন দিন কভিড-১৯ সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের ওপরে। গতকাল জেলা সিভিল সার্জনের তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৯৮৭ জন।
এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোয় বেড়েছে রোগীর চাপ। সেই সঙ্গে বাড়ছে প্রয়োজনীয় ওষুধের চাহিদা। কভিডে আক্রান্ত রোগীর পাশাপাশি সাধারণ রোগীর চাহিদা অনুযায়ী প্যারাসিটামলের সংকট তৈরি হয়েছে।
শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে জেলায়। কভিড আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও যখন বাড়ছে, তখন প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সরবরাহ না থাকায় ভোগান্তি বাড়ছে মানুষের।
গতকাল সোমবার দুপুরে জ্বরের ওষুধ এইচ প্লাসের জন্য এক ফার্মেসি থেকে অন্য ফার্মেসি ঘুরছিলেন পৌর এলাকার দত্তেরহাটে নাছির উদ্দিন। বেশ কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরেও তিনি ওষুধটি পাননি।
চাহিদাপত্র নিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরেও ওষুধ না পাওয়া জরিনা আক্তার বলেন, পাঁচ বছরের ছেলের জ্বরের জন্য ওষুধ নিতে এসেছিলাম। কিন্তু কয়েকটি বড় ফার্মেসিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাইনি।
সোনাপুর জিরো পয়েন্ট মোড়ে একটি ফার্মেসিতে জ্বরের ওষুধ কিনতে এসেছিলেন জিয়াউল হাসান। তিনি জানান, এ এলাকার আশেপাশসহ বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে এক পাতা নাপা ওষুধ সংগ্রহ করেছি। তাও বেশি দামে।
শহরের পৌর বাজারের এক ফার্মেসির মালিক বলেন, জ্বরের ওষুধ নাপা, নাপা প্লাস, নাপা এক্সটেন্ড, এইস, এইস প্লাস, এইচ এক্স আর ট্যাবলেট, ফাস্ট, ফাস্ট এক্স আর প্রভৃতি ওষুধের সংকট রয়েছে। কোম্পানি যে পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করে তা চাহিদার তুলনায় একেবারে অপ্রতুল।
গত সাত থেকে আট দিন ধরে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই কোম্পানিগুলোয় ওষুধের জন্য তাগিদ দেয়া হচ্ছে। তবে সরবরাহ না থাকায় আমাদেরও কিছু করার থাকছে না।
আরেকটি ফার্মেসির পরিচালক বলেন, হঠাৎ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে জ্বরের ওষুধের চাহিদা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। আপাতত নাপা ও এইস গ্রুপের অন্য ওষুধ দিয়ে ক্রেতাদের বিদায় করা হচ্ছে। আরও বেশি সময় নাপা ও এইস ট্যাবলেট ও সিরাপের সরবরাহ না থাকলে ভোগান্তি বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জেলার একটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এ জাতীয় ওষুধ সংকট হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। এটি সংশ্লিষ্ট ওষুধ কোম্পানির পরিকল্পিত কাজ কি নাÑতদন্ত করে দেখা উচিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।
নোয়াখালীর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খোরশেদ আলম খান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফার্মেসিগুলোয় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। কোনো ফার্মেসি এসব ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে এবং বেশি দামে বিক্রির প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলার সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার বলেন, বাজারে প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধের সংকট থাকার কথা নয়। তবু কেউ এ ওষুধগুলোর কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে ফার্মেসিগুলোয় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।