আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী : নোয়াখালীতে সরকারের ঘোষণার প্রথম দিন থেকে রোস্টার পালন না করে লোডশেডিং করায় সব নমুনায় ওলটপালট হয়ে গেছে। প্রতি ঘণ্টার পরই ঘণ্টাব্যাপী লোডশেডিং করা হয়েছে। মানা হয়নি কোনো বিধিবিধান। অবস্থাদৃষ্টে যখনই মনে হচ্ছে তখনই করা হচ্ছে লোডশেডিং। এ কারণে প্রায় সব এলাকাই দিনে ১৪-১৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কবলে।
ছুটির দিনেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। যখন সব জায়গায় তাপদাহে মানুষ হাঁপিয়ে উঠছে ঠিক তখনই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৪-১৫ ঘণ্টা লোডশেডিং করছে। এতে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির হিস্যা গুনতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠান মালিকদের।
বিদ্যুৎ বিভাগের জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের যে পরিসংখ্যান দিচ্ছে তা বাস্তবের সাথে কোনো মিল নেই। জেলা সদর, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় রয়েছে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুতের ৬ লক্ষাধিক এবং জেলা শহর মাইজদী, প্রধান বাণিজ্য শহর চৌমুহনীতে রয়েছে পিডিবির কয়েক হাজার গ্রাহক।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের ফলে কার্যত জনজীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাত ৮টার মধ্যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজে আসছে না।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, তারা জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদার ৩৩ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে। সে হিসেবে ২৪ ঘণ্টায় ৮ ঘণ্টায় লোডশেডিং হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে ১৪-১৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে যে লোডশেডিংয়ের রোস্টার দেয়া হয়েছিল, সেটি সবাই মেনে নিয়ে কাজকর্ম করতে পারতেন। কিন্তু রোস্টার না দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং জনজীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, দুই ঘণ্টা পর এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে আধঘণ্টা পরও লোডশেডিং হচ্ছে। এই অবস্থায় তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। অপরদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেমে এসেছে স্থবিরতা।
জেলার কয়েকটি এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক কিছু নির্ভর করে বিদ্যুতের ওপর। যে রোস্টার দেয়ার কথা ছিল সেটি মেনে প্রস্তুতি নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করা যেত। কিন্তু অতি মাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারণে এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সচল রাখাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তারা জানান, রোস্টার অনুযায়ী বিদ্যুৎ দেয়া হলে নোয়াখালীতে অতিরিক্ত লোডশেডিং হবে না। এতে করে জনজীবনে তেমন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু অতি মাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারণে বাসাবাড়িতে তীব্র গরমে যেমনি মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন তেমনি ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন না।
রোস্টারের বাইরে লোডশেডিং-বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল আমিন জানান, বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তিনি জানান, নোয়াখালীতে বিদ্যুতের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, রোস্টার অনুযায়ী জাতীয় গ্রিড থেকে তা সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু দেয়া হচ্ছে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। এ কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তিনি জানান, জেলায় বিদ্যুতের যে পরিমাণ চাহিদা, তার বিপরীতে অর্ধেক পেলেও মোটামুটি চলা যেত।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম মো. জাকির হোসেন বলেন, আমরা চাহিদার ৩৩ ভাগ বিদ্যুৎ পেয়ে থাকি। যার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এরপর থেকে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভা ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভাসহ অন্যান্য সভা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। তিনি জানান, এসব সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধাগণসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের অংশ নিতে হয়। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের আসতে হয় অনেক দূর থেকে, এতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হয়। কিন্তু সভাগুলো ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে হওয়ায় সেই জ্বালানি সাশ্রয় হচ্ছে।