আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী: মাত্রাতিরিক্ত শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নোয়াখালীর অধিবাসীরা। জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরীক্ষায় দেখা গেছে, শব্দদূষণ সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করেছে। হাইড্রোলিক হর্নের যথেচ্ছ ব্যবহার, যত্রতত্র মাইক বাজানো ও নির্মাণকাজের মাত্রাতিরিক্ত শব্দের প্রভাবে বৃদ্ধ ও শিশুদের হƒদরোগ ও শ্রুতিহীনতার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, যানবাহনের হর্ন, সভা-সমাবেশের মাইক, কনসার্ট, যত্রতত্র কারণে-অকারণে মাইকিং, কাচ কাটার শব্দ ও নির্মাণকাজ-জনিত শব্দেও দূষণ বাড়ছে। এ-সংক্রান্ত আইন থাকলেও তা কেউ মানছে না। এ ব্যাপারে ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তবে জেলার পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘শুধু আইনের প্রয়োগ দিয়ে নয়, জনগণকেও সচেতন হতে হবে।’
জানা গেছে, জেলা শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানকে নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা নামে ভাগ করে শব্দদূষণ পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে নীরব এলাকা হিসেবে ধরা হয় হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ ও আবাসিক এলাকাকে। এসব এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা হচ্ছে দিনে ৫০ ডেসিবেল ও রাতে ৪০ ডেসিবেল।
কিন্তু নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল গেটে শব্দদূষণের মাত্রা ৭৬ ডেসিবেল রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া টাউন হল মোড়, জামে মসজিদ মোড়, পৌরবাজার, সোনাপুর জিরো পয়েন্ট ও চৌমুহনী চৌরাস্তায় ৭৬ ডেসিবেল থেকে ৭৮ ডেসিবেল মাত্রা পাওয়া যায়। সম্প্রতি এসব পরীক্ষা করেছে একটি উন্নয়ন সংস্থা।
শব্দদূষণের কথা স্বীকার করে নোয়াখালী বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান আবদুল মালেক বলেন, ‘শব্দদূষণ ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা পরীক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবছি।’
অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় শব্দের সহনীয় মান দিনের বেলায় ৫০ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় (আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্য) ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় ৭৫ ডেসিবেল নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু একটি বেসরকারি সংস্থার সর্বশেষ পরীক্ষায় দেখা গেছে, টাউন হল এলাকার সামনে ৭৮ ডেসিবেল, পৌরবাজার এলাকায় ৭৭ ডেসিবেল, চৌরাস্তা এলাকায় ৭৮ ডেসিবেল ও চৌমুহনী রেলগেট এলাকায় ৭৭ ডেসিবল শব্দ রয়েছে।
শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিক প্রসঙ্গে হƒদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুস সাত্তার ফরায়েজী জানান, ‘উচ্চমাত্রার শব্দে দীর্ঘক্ষণ থাকলে শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে। এছাড়া অধিক শব্দ হƒৎস্পন্দন বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে হƒদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্কুল-কলেজের পাশে জোরে হর্ন বাজানো ও মাইক বাজানোর ক্ষেত্রে
নিষেধ-সংবলিত সাইনবোর্ড টাঙানো আছে। কিন্তু তা কেউ মানছে না। এছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণের সময় নির্মাণযন্ত্রের শব্দ মাত্রা ছাড়িয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
পরিবেশ আইন অনুযায়ী, যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন লাগানো নিষেধ হলেও এখনও ট্রাক-বাসে এসব হর্নের ব্যবহার রয়ে গেছে। মূলত আইনের যথাযথ ব্যবহার না থাকায় শব্দদূষণ রোধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।