আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী: নোয়াখালী আঞ্চলিক ভূমি জরিপ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ফলে হাজার হাজার মানুষ বেকায়দায় পড়েছেন। একের জমি অন্যের নামে দেয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার মূল জমির মালিকরা।
জানা যায়, বিগত ১৯৫৯-৬০ সালে জেলা জরিপের পর ২০০৩ সালের দিকে ফের বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের অধীনে ভূমি জরিপ শুরু হয়। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এ জরিপ নিষ্পন্ন করতে অনেক সময়ও পেরিয়ে যায়।
সূত্র জানায়, বিশেষত নোয়াখালী সদর ও সুবর্ণচরের প্রায় মৌজার মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম গত ২০১৪-১৫ সালের দিকে নিষ্পন্ন হয়। এরই মধ্যে জরিপ অধিদপ্তর কর্তৃক হাল জরিপের ছাপা খতিয়ানও মাঠপর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে। আবার অনেক খতিয়ান ফাইল বন্দির অজুহাতে সংশ্লিষ্ট ভূমির মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্র্থ হাতিয়ে বিতরণ করা হচ্ছে।
এদিকে এসব ছাপা খতিয়ান হাতে পেয়ে অনেকের মাথায় হাত পড়েছে। জানা যায়, খতিয়ানের চূড়ান্ত মাঠপর্চায় জমির পরিমাণ তিন একর দেখানো হলেও ছাপাকালে তার কিয়দংশে সরকারকে মালিক দেখিয়ে ভূমি মালিকদের প্রতারিত করা হয়েছে।
আদালতে মামলা করার চিন্তাভাবনা ও আর্থিক টানাপড়েনের চিন্তায় অনেক ভূমির মালিক চরমভাবে চিন্তিত হচ্ছেন। সূত্র জানায়, মাঠপর্যায়ে জরিপে আমিনদের দেয়া খতিয়ানটুকু জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে প্রেরণকালে এসব দুর্নীতি, অনিয়ম ও হেয়ালিপনার আশ্রয় নিয়েছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। জরিপকালে দুর্নীতির এমন এক অভিযোগে কিছুদিন আগে জেলার একটি আদালত নোয়াখালী সদর উপজেলার সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির আহমেদকে সাজাও দিয়েছেন। বর্তমানে এ দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি জেলহাজতে রয়েছেন। সাধারণ মানুষকে নাজেহাল, হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার করার লক্ষ্যে তারা এ ধরনের অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছেন।
জেলা সদরের ধর্মপুরের সেলিম মিয়া জানান, তার সত্যায়িত খতিয়ানে তিন একর জমির পুরোটারই মালিক হিসেবে মাঠপর্যায়ের জরিপে আমিনের সিল-সইমোহর সম্পাদন থাকলেও বর্তমানে ছাপা খতিয়ানে ২০ শতাংশ জায়গার মালিক সরকারকে দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, বাকি দুই একর ৮০ শতক জমি যে কাগজে মালিক হয়েছি, ঠিক ২০ শতক জায়গাও একই কাগজে মালিক আছি। এ ভূমিতে ঘর, বাড়ি, পুকুর সবই আছে তার পরিবারের। তিনি বলেন, কার্যত যেন এক দেশে দুই আইন। সবটুকু জায়গাও তার দখলে রয়েছে বলে তিনি জানান।
একই অভিযোগ করেছেন ধর্মপুরের আবদুর রহমান হাওলাদার, ছাবির আলী, কবির, আবুল খায়ের, আবদুল করিম, ছুট্টু মিয়া, নুর রহমান, নুর মোহাম্মদ, মনির উদ্দিন, আবদুর রহিমসহ অনেকে। তারা বলেন, এসব একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্নীতির বহিঃপ্রকাশ। তারা মনে করেন, জরিপ অধিদপ্তরের লোকজন সারাজীবনই মানুষকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করতে চায়।
ভাটিরটেক মৌজায় জনৈক বীর মুক্তিযোদ্ধার দুই একর ৫০ শতকের মধ্যে মাত্র ৬৪ শতক জমি মাঠ খতিয়ানে দেয়া হয়েছিল। তিনি এরপর জরিপের যথোপযুক্ত আদালতে আপিল করলে শুনানি শেষে পুরো সম্পত্তিই তার পক্ষে রায় দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে ছাপা খতিয়ানেও যেই লাউ, সেই কদু হিসেবেই দেখানো হয়। ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার দাবি করছে, এটি মূলত একটি প্রতারণাও, যা সরকারকে বিব্রত ও হয়রানি করারও নামান্তর।
দুর্নীতিবাজ জরিপ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতি, খামখেয়ালি ও হেয়ালিপনায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবে বলে জানান নোয়াখালীর আইনজীবী জামাল উদ্দিন ভূঁঞা। তিনি বলেন, ব্যক্তিদখল ও মালিকানাধীন যেসব সম্পত্তি সরকারের নামে রেকর্ডে এসেছে, সেগুলোর বিষয়ে কেউ মামলা করলে প্রত্যেকটিতেই সরকারকেই বিবাদী করতে হবে। তাতে সরকারই আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবে। আবার আইনজীবী ও ভূমি উপসহকারীরাও দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করে এসব নিয়ে কোর্ট-কাচারিতে বারবারই ছুটতে হবে।
এ বিষয়ে নোয়াখালীর বর্তমান জোনাল কর্মকর্তা ড. মো. সাইফুল আলম বলেন, তিনি যোগদানের আগেই এসব হয়েছে।