নোয়াখালী উপকূলে বিপন্ন ডাহুক

আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী: ‘রাত্রিভর ডাহুকের ডাক … এখানে ঘুমের পাড়া, স্তব্ধদিঘি অতল সুপ্তির। … কান পেতে শোনো আজ ডাহুকের ডাক।’ কবি ফররুখ আহমেদের কবিতার সে সময়ের মতো কিছুকাল আগেও গভীর রাতেও শোনা যেত ডাহুকের ডাক। সে ডাকে অনেকের ঘুম ভাঙতো।

তবে আজকাল নোয়াখালীতে আর ডাহুকের কণ্ঠ শোনা যায় না। এক সময় বর্ষা ও শরতে ডাহুক জেলার উপকূলীয় এলাকার বাড়িতে গৃহপালিত হাঁস-মুরগির সঙ্গে বেড়াত। এখন আর তাদের আনাগোনা চোখে পড়ে না। দৃষ্টিনন্দন ডাহুক পাখি হারিয়ে যেতে বসেছে।

ডাহুক খুব সতর্ক পাখি। আত্মগোপনে পারদর্শী। খুব ভীরু। দেখতে চমৎকার। পুকুর, খাল, জলাভূমি, বিল বা নদীতীরে গর্ত করে বসবাস করে। মাত্র এক দশক আগেও আমতলীসহ উপকূলের খাল, বিল-ঝিল, ডোবা, নালা-পাশের ঝোঁপঝাড়ের ভেতরে ও গাছের ঝোঁপযুক্ত ডালে দলবেঁধে বাস করত ডাহুক।

নিরাপত্তা পেলে মাটিতেও বাসা করে এ পাখি। পাঁচ থেকে ছয়টি ডিম পাড়ে এরা, ডিমের রং ফিকে হলুদ বা গোলাপি আভা। বর্ষাকাল এদের প্রজনন ঋতু। মা ডাহুকের সঙ্গে বাবা ডাহুকও ডিমে তা দেয়। বাচ্চার রং সবসময় হয় কালো। ডিম ফোটে ২১ থেকে ২৪ দিনে। আর ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টা পর বাচ্চারা বাসা ছাড়ে। মাস তিনেক পর বাচ্চা ডাহুক আলাদা জীবন বেছে নেয়। প্রজননের সময় একটি পুরুষ ডাহুক অন্য পুরুষ ডাহুককে সহ্য করতে পারে না। দেখলেই তারা মারামারি করে। এ পাখি লড়াকু প্রকৃতির।

ডাহুকের খাদ্য জলজ পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ। এছাড়া শাপলা-পদ্মের নরম অংশ, কচি পানিফল, জলজ শেওলা, লতাগুল্মের নরম অংশ, ধান, কাউন, ডাল, সরষে, শামুক, কেঁচো, জোঁক, মাছ, ছোট মাছ, শাকসবজি ও ফল খেয়ে থাকে।

বর্তমানে ডাহুকের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। খাদ্য সংকট ও প্রজননকালীন শিকারিদের উৎপাতে হারিয়ে যাচ্ছে এ পাখি। গভীর বনজঙ্গলেও এখন শিকারিদের হানা। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।

সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের আবু তাহের মিয়া বলেন, ডাহুক বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে দেখা মেলে। ঝোঁপঝাড় উজাড় হওয়ায় ডাহুকের আবাসস্থল হুমকিতে।

নোয়াখালীর জেলা বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা বলেন, প্রকৃতিকে সুন্দর রাখতে পাখপাখালিকে নিরাপত্তা দিতে হবে। কোথাও পাখি আটকের খবর পেলে আমরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে থাকি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০