আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী: নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার অনেক এলাকায় বোরো ধানের ভালো ফলন হলেও দাম নিয়ে কৃষকের মন ভালো নেই। চাষাবাদের কাজে আয়-ব্যয়ের হিসাব কষে নানা গরমিল মনে হচ্ছে তাদের কাছে।
জেলার কৃষি বিভাগ মনে করছে, অনুক‚ল পরিবেশ এবং সময়মতো সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচ সুবিধা পাওয়ায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
তবে প্রতি বছরই বোরো মৌসুমে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার শ্রমিক আসে। চলতি বোরো মৌসুমে করোনা দুর্যোগের কারণে বাইরের শ্রমিক আসেনি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রংপুর থেকে যে ১৫২ জন এসেছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এতে ধান কাটতে অসুবিধায় পড়ছেন চাষি।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা কৃষকের পাশে দাঁড়ালেও তা ছিল সাময়িক সময়ের জন্য। এ পরিস্থিতিতে কৃষক নিজেই ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলছেন।

জানা গেছে, নোয়াখালীতে সরকারিভাবে এখনও ধান কেনা শুরু হয়নি। এ জন্য ভালো ফলনের পরও প্রকৃত কৃষক লাভবান হবেন কি না, তা নিয়ে চরম সংশয় দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগী দালাল, ফরিয়া ও দাদন ব্যবসায়ী মহাজনদের পোয়াবারো হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন কৃষিবিদরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে এ জেলার ৯টি উপজেলায় সরকারিভাবে যে পরিমাণ জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সে অনুযায়ী আবাদ করা হয়নি। যা হয়েছে তাতে ফলন ভালো হয়েছে।
জেলার সদর, বেগমগঞ্জ, চাটখিল, সেনবাগ, সোনাইমুড়ি, কবির হাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সুবর্ণচরসহ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা এখন ধান কাটার পাশাপাশি ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান বাড়িতে আনা, মাড়াই ও বিক্রির কাজে। কিষানিরাও ব্যস্ত বছরের একমাত্র ফসলটি ঘরে তুলতে। কারও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। জেলার উত্তরাঞ্চলের গ্রামগুলোর চারদিকে যেন ধান কাটাকে কেন্দ্র করে কিছুটা হলেও উৎসবের আমেজ রয়েছে।
সেনবাগ উপজেলার কাদরা গ্রামের স্থানীয় কৃষক শাহ আলম জানান, চলতি মৌসুমে মণপ্রতি ধান চাষে খরচ পড়েছে প্রায় হাজার টাকার মতো। কিন্তু বর্তমান বাজারমূল্য মণপ্রতি সাড়ে পাঁচশ টাকা। তবে এই ধান কদিন ধরে রাখা গেলে হয়তো দাম কিছুটা আশানুরূপ পাওয়া যেতে পারে।
সুবর্ণচরের সোলেমান বাজারের কৃষক সেলিম বলেন, ধারদেনা করে তারা চাষ করেন। সমিতির কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমি চাষ করার পর সমিতির লোকজন ধান কাটার আগেই বাড়ি এসে বসে থাকে। ফলে ক্ষেত থেকে ধান কাটার পরই তা বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না তার মতো অধিকাংশ কৃষকের পক্ষে।
পুরো মৌসুমে শ্রম দিয়েও ধানের প্রকৃত দাম না পাওয়ায় আশঙ্কা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন সদর উপজেলার চরমটুয়ার কৃষক আবদুর রহমান। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ধানের ন্যায্য দাম না পেলে অন্য পেশায় চলে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
প্রতি বছর নতুন ধান উঠতে শুরু করার পর থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণে এখন অনেকটাই মুখর থাকে এলাকায় ধান কেনাবেচার হাটগুলো। এবার করোনার কারণে তাও দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় আড়তদাররাও ধানের বাজারমূল্য নিয়ে কৃষককে হতাশার কথা শোনাচ্ছেন।
সোনাপুরের আড়তদার আবুল মোহন বলেন, চালকল মালিকরা বেশি দামে ধান কিনতে চাচ্ছেন না। ফলে অভাবী কৃষক কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
জেলা কৃষির উপপরিচালক ড. আবুল হোসেন বলেন, সরকারি নির্দেশনা পেলে আমরা ধান কেনার প্রক্রিয়ায় হাত দেব।