প্রতিনিধি, পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় আরও ১৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে ৬৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হলো। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন পাঁচজন। ৬৮ লাশের মধ্যে নারী ৩০, পুরুষ ১৭ ও শিশু ২১ জন।
সন্ধ্যায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন উদ্ধার কার্যক্রমের কন্ট্রোল রুমের প্রধান ও পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায়। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৬৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের করা তালিকা অনুযায়ী এখনও পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছেন।’
মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে স্থাপিত জেলা প্রশাসনের জরুরি তথ্য ও সহায়তা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, নৌকাডুবির ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৮ পুণ্যার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে অনেক পরিবারের একাধিক সদস্য রয়েছেন। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন পাঁচজন। স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে লাশ সৎকারে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।
এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন নারী-শিশুসহ ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন আরও ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার কার্যক্রমের তৃতীয় দিন আরও ১৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের তিনটি ইউনিট উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছে। তবে বেশিরভাগ লাশ স্থানীয় ব্যক্তিরা উদ্ধার করেছেন বলে জানা গেছে।
মাড়েয়ার বাসিন্দা ও ওই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মাহবুব আলম প্রধান বলেন, ‘এর আগে এমন নৌকাডুবির ঘটনা এই এলাকায় ঘটেনি। একসঙ্গে এত মানুষের প্রাণহানিও কখনও হয়নি। আমার ষাট বছরের জীবনে তো বটেই, আমার বাপ-চাচারাও এত মৃত্যু একসঙ্গে দেখেননি।
মাড়েয়ার নিকটবর্তী রাঙ্গামাটি শ্মশানঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে নৌকাডুবির ঘটনায় উদ্ধার হওয়া মরদেহ সৎকার চলছে। কোনো মরদেহ পোড়ার ছাই পড়ে আছে, আবারও কোনো মরদেহ পোড়ানোর জন্য চিতায় নেয়া হয়েছে। পঞ্চগড়ের বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন শ্মশানের চিত্র একই। করতোয়া থেকে একের পর এক মরদেহ উদ্ধার করে তা সৎকারের জন্য শ্মশানে নিচ্ছেন স্বজনরা। আগুনে স্বজনদের মরদেহ পুড়লেও তাদের শোক পোড়াবেন কীভাবে, সে প্রশ্ন তাদের চোখে-মুখে।