বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হলেও নদীর গুরুত্ব আগের মতো আর নেই। পলি পড়ে বেশিরভাগ নদীই প্রায় ভরাট ও মৃতপ্রায়। বর্ষার দু-তিন মাস ছাড়া নাব্য-সংকটে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অধিকাংশ নদীরই সদ্ব্যবহার হয় না। নদীকে মৃতপ্রায় করে তোলার পেছনে প্রাকৃতিক কারণ যতটুকু না দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ। আমাদের মূল নদীগুলোর পানিপ্রবাহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আসে। তারা সেখানে নানা জায়গায় বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যা করতে পারে না, সেগুলোও তারা করছে। যে নদীবিধৌত অঞ্চলে উর্বর বাংলাদেশ অবস্থিত, নাব্য না থাকলে তা আস্তে আস্তে মরুসদৃশ অবস্থায় পৌঁছাবে। ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের আভাস দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টিপাত কমে গেছে। এ অবস্থায় নদীরক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেই হবে।
প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আগের মতো নেই। তাই নদীকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি তখনই কার্যকর হবে, যখন একে ব্যবহারিক পর্যায়ে নিয়ে আসা যাবে। এক্ষেত্রে নৌপথকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে। এটা স্বীকৃত, সময় কিছুটা বেশি লাগলেও নৌপথে পণ্য পরিবহন খরচ সবচেয়ে কম। বাংলাদেশে এমন কোনো জেলা নেই বললেই চলে, যেখানে নদীপথে যাওয়া যায় না। অবৈধ দখল, চর পড়া, নদীর গতিপথ পরিবর্তন প্রভৃতি কারণে নৌপথ সংকুচিত হয়ে এলেও সেগুলো পুনরুদ্ধার করা এখনও সম্ভব। শুধু ড্রেজ করেই যে কাজটি করা সম্ভব, তা নয়। ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি সারা বছর নৌপথে পণ্য পরিবহনের বিষয়টিও বাস্তবায়ন করা না হলে ড্রেজিংয়ের কিছুদিন পরই নদী আবার ভরাট হয়ে পড়বে। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন না করার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। গাঙ্গেয় অববাহিকার নদীগুলোর বৈশিষ্ট্য অনুসারেই প্রতি বছর এগুলোয় প্রচুর পলি পড়বে। এসব সরিয়ে পর্যাপ্ত নাব্য নিশ্চিত করতে হলে পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করতে হবে। না হলে অর্থ খরচই সার হবে, দেশ উপকৃত হবে না।
সম্প্র্রতি শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে লঞ্চ ও স্পিডবোট ভাড়া কমানো হয়েছে বলে একটি খবর গত বুধবার দৈনিক শেয়ার বিজ-এ প্রকাশিত হয়েছে। আমরা মনে করি, এর ফলে ওই রুটে যাত্রী ও নৌযানের সংখ্যা বাড়বে। সারা দেশেই বিআইডব্লিউটিএ, লঞ্চ মালিক ও স্পিডবোট মালিক সমিতি বসে এভাবে রুটের দৈর্ঘ্য ও যাত্রীর সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে যদি ভাড়া নির্ধারণ করতে পারে, তাহলে নৌপথে যাত্রী বাড়বে বৈ কমবে না। তবে নৌকা, লঞ্চ, স্পিডবোটসহ সব বাহনেই নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে। এসব প্রক্রিয়ায় নৌপথকে যেমন আরও কার্যকর করা যাবে, তেমনি নাব্য বজায় থাকায় রক্ষা পাবে নদীগুলোও। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে যথাযথ গুরুত্ব দেবে, এ আমাদের প্রত্যাশা।
নৌপথকে আরও গুরুত্ব দেওয়া হোক

Add Comment