নদীমাতৃক এ দেশে একসময় নৌপথই ছিল প্রধান যাতায়াতমাধ্যম। কালের পরিক্রমায় তা সড়কপথ দখল করেছে। বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার আগ পর্যন্ত রাজধানীর সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের যাতায়াতের বড় মাধ্যম ছিল নৌপথ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম নৌপথ। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে হয়তো এ রুটে সড়কপথের গুরুত্ব বাড়বে। এ অবস্থায় গতকাল শেয়ার বিজে ছাপা হয়েছে ‘কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটের কার্যক্রম শুরু’ শিরোনামের খবর। এতে বলা হয়, উদ্বোধন হওয়া নতুন এ ঘাট থেকে লঞ্চ, ফেরি, স্পিডবোটসহ সব নৌযান শিমুলিয়ার উদ্দেশে চলাচল করছে। এতে দীর্ঘদিনের পুরোনো কাওড়াকান্দি ঘাটের বিলুপ্তি ঘটে। নতুন এ ঘাটের ফলে পারাপারে ১৫ মিনিট সময় কম লাগবে বলে জানা গেছে। এতে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সহজ এবং সময় সাশ্রয় হওয়াটাই স্বাভাবিক।
নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে বাস বা অন্যান্য পরিবহনের তুলনায় খরচ কম হয় সাধারণত। অনেকে এ ধরনের নৌপথে যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। নৌপথ প্রকৃতির দান, সে কারণেও এর খরচ কম। এটি কেবল রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। এ পথে দূর থেকেও পণ্য সুরক্ষিতভাবে আনা যায়। আম-কাঁঠালের মৌসুমে অনেক ব্যবসায়ী রাজধানীতে নৌপথে নিয়ে আসেন এ ফল।
সাধারণত শীত মৌসুমে পানি কমে যাওয়ায় বেশ কিছু নৌপথে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। বিশেষ করে বড় লঞ্চ ও ফেরি চরে আটকে যায়। ফলে ড্রেজিং করে নৌপথ সচল রাখতে হয়। ড্রেজিংয়ে উদাসীনতা, ধীরগতি ও অনিয়ম ঘটলে নৌচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াসহ বড় ফেরিঘাটগুলো সচল রাখতে নিয়মিত ড্রেজিং প্রয়োজন। এসব ঘাট দিয়ে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহন হয় অনেক বেশি। বর্ষাকালে উজান থেকে আসা পলি নদীর তলদেশে জমে ভরাট হয়। এজন্য নিয়মমাফিক ড্রেজিং দরকার হয়ে পড়ে। ড্রেজ করে আবার ওই পলি-বালি নদীতেই ফেলা হয় অনেক ক্ষেত্রে। অনেকে অভিযোগ করেন, এতে শুধু অর্থের অপচয় হয়। কীভাবে এর কার্যকর সমাধান করা যায়, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা ভাবতে পারেন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌ-চ্যানেলের নাব্য বজায় রাখা, নদী-শাসন বা নদী-ব্যবস্থাপনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার প্রয়োগ ঘটাতে হবে। সর্বোপরি নৌপথে যাতায়াতব্যবস্থার উন্নয়নে সংশ্লিষ্টরা যথাযথ ভূমিকা রাখবেন এটাই প্রত্যাশা।