নৌপথে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিন

আবহমানকাল থেকেই নদী বাংলাদেশের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। এখনও বলা হয়ে থাকে নদীপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বড় জনগোষ্ঠী যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে নদীর ওপর নির্ভরশীল। সেই নিরাপদ ও সাশ্রয়ী জলপথও আর নিরাপদ নয়। ঢাকা-বরগুনা রুটে চলাচলকারী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে আগুনে মারা যান অন্তত ৩৯ জন। দগ্ধ হয়ে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন ১৫ জন। শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তারা কেউই শঙ্কামুক্ত নন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক। ঢাকার সদরঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএ’র পরিবহন পরিদর্শক দীনেশ কুমার সাহার বরাত দিয়ে শেয়ার বিজের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রায় ৪০০ যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। চাঁদপুর ও বরিশালে যাত্রী ওঠানামা করে। তবে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা বলছেন, তিনতলা লঞ্চটিতে অগ্নিকাৃøর সময় হাজারখানেক যাত্রী ছিলেন।

আমাদের প্রত্যাশা, আহতদের রাষ্ট্রীয় খরচে সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তিকে হারানো পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। ভবিষ্যতে নদীপথে যেন দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

অভ্যন্তরীণ জাহাজ চলাচল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে চারটি নিবন্ধন ও জরিপ অফিস এবং ছয়টি অভ্যন্তরীণ জাহাজ পরিদর্শন রয়েছে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের। রয়েছে মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়। নতুন জাহাজ তথা নৌযান নিবন্ধন এবং সেগুলোর বার্ষিক জরিপ নিবন্ধন ও সমীক্ষা কার্যালয়ের নিবন্ধক এবং সার্ভেয়ার দ্বারা পরিচালিত হয়। ফিটনেস, রুট পারমিট মেনে যথানিয়মে যান চলাচল নিশ্চিতে কাজ করছে আইডব্লিউটিএ। অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী নৌযানগুলো পরিদর্শন কার্যালয়ের পরিদর্শকদের দ্বারা সময় পরীক্ষা করা হয়, যারা আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত।

নৌপরিবহন অধিদপ্তর নৌপথের নাব্য সংরক্ষণ, জাহাজ চলাচল খাতে দক্ষ জনবল সৃষ্টি, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ যাত্রী ও পণ্য পরিবহন এবং বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাজ করছে। কিন্তু নৌপথে অগ্নি দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে, তা নীতিনির্ধারকরা বিবেচনায় নেননি। নৌযান চলাচল করে পানিতে, পানিতে আগুন লাগে কীভাবে সেটাও বিবেচ্য। কিন্তু এতে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতা আবারও সামনে এসেছে। ঈদের সময় লঞ্চ-স্টিমারে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। হয়তো যাত্রীদের চাপ উপেক্ষা করার সুযোগ থাকে না। এখন ঈদ-উৎসবের সময় নয়। এখন কেন ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হবে। আইনলঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও সংস্থা কোনো ব্যবস্থা নেয় না বলেই নৌপথে গণপরিহনে শৃঙ্খলা নেই।

গণমাধ্যমের খবর, লঞ্চের ইঞ্জিন রুমের অংশটি বেশি পুড়েছে। তা থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ইঞ্জিনটি মেয়াদোত্তীর্ণ কি না, তাও আমাদের জানা নেই। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যে নিয়মনীতি মানে না, তা পদ্মা সেতুতে বারবার ফেরির আঘাতই প্রমাণ করেছে। নৌযান পরিদর্শন, নিবন্ধন ও ফিটনেস দেখভালে থাকা নৌপরিবহন অধিদপ্তরের দায়িত্বহীনতার পরিচয় মিলেছে। আইডব্লিউটিএ-নৌপরিবহন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা কারও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০