শেয়ার বিজ ডেস্ক: বাংলাদেশের নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ, যাত্রী এবং পরিবহন কর্মীদের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধান সম্পর্কে সচেতনতা এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার বিষয়ে তাদের মূল্যায়নের উপর গুরুত্বারোপ করে পরিচালিত কমপ্লায়েন্স জরিপ , প্রাপ্ত ফলাফল উপস্থাপনার জন্য ডেভেলপমেন্ট এ্যাকটিভিটিস অফ সোসাইটি (ডাস্) ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) যৌথ উদ্যোগে ২০ মে ২০২৪ সকাল ১১টায় ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
ডাস তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর টীম লিড মোঃ আমিনুল ইসলাম বকুলের সভাপতিত্ত্বে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রাক্তন সমন্বয়কারী ও অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খন্দকার। এছাড়াও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের পক্ষে এইড ফাউন্ডেশনের সাগুফতা সুলতানা, টিসিআরসি’র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মো: বজলুর রহমান, বিইআর এর হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের সৈয়দা অনন্যা রহমান, মানস এর আবু রায়হান এবং বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটি’র প্রতিনিধিবৃন্দ গবেষনালব্ধ ফলাফলের উপর তাদের মূল্যবান মতামত উপস্থাপন করেন।

ডাস এর প্রোগ্রাম অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু’র সঞ্চালনায় গবেষনালব্ধ ফলাফলের উপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ডাস্ পলিসি এনালিস্ট মোঃ আসরার হাবীব।
উপস্থাপনায় উল্লেখ করা হয় যে, জরিপের লক্ষ্য ছিল তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলাফল বুঝা এবং উন্নতির জন্য ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা। জরিপের জন্য ১০০ জন গনপরিবহন যাত্রী, ৩০ জন পরিবহণ কর্মকর্তা, ২৮ জন সংশ্লিষ্ট সরকারী বেসরকারি অন্যান্য কর্মকর্তাসহ ২০১ জনের স্যাম্পল নির্ধারন করা হয়েছিলো।
জরিপে প্রাপ্ত তথ্যগুলি নির্বাচিত তথ্যদাতাদের তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের প্রত্যক্ষ ক্ষতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের উপস্থিতি নির্দেশ করে তবে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে তাদের জ্ঞান কিছুটা দুর্বল অবস্থান দেখায়। গনপরিবহন ও টার্মিনাল এলাকায় যাত্রীদের মধ্যে ধূমপানের ঘটনা হ্রাস পেলেও পরিবহনকর্মীদের ধূমপানমুক্ত কর্মক্ষেত্র তৈরিতে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। জরিপের ফলাফলে আরো দেখা যায় যে, সকল নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং স্টেকহোল্ডাররা আগে তামাক ব্যবহারের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে সম্পুর্নভাবে অবহিত না হলেও এখন তারা অনেকটায় অবহিত।

পরিবহন সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা তাদের অফিসকে ধূমপানমুক্ত দাবী করলেও দাপ্তরিক নির্দেশনার অভাব বা ধূমপায়ীদের অসহযোগিতা ধূমপানমুক্ত কর্মপরিবেশ বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। এছাড়া যাত্রীদের মতামত অনুসারে, পুর্বের (৭৫%) তুলনায় নৌ পরিবহন ধূমপানের হার কমেছে (৪৫%)। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে যাত্রীদের অবহিতর হার দিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে তবে নৌ-পরিবহনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ কার্যকর করতে হলে যাত্রীদের এ বিষয়ে আরও শিক্ষিত করে তুলতে হবে।
গণপরিবহন ও টার্মিনাল এলাকায় তামাকমুক্ত সাইনেজ বেড়েছে ১৪% থেকে ৫৪%। তিন চতুর্থাংশের অধিক নৌ-পরিবহন কর্মী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন (৭৬%) ও এবং পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি (৮০%) সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত যেখানে দুই বছর পুর্বেও দুই তৃতীয়াংশ কর্মী এ দুটি বিষয় সম্পর্কে অবহিত ছিলো না।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, সমীক্ষা অনুযায়ী দুই বৎসর কার্যকাল শেষে অগ্রগতি হলেও, বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টরে কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণ এবং ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে টেকসই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এছাড়া বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টরে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ সচেতনতা এবং অনুশীলনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক উন্নতি হলেও, ধূমপানমুক্ত নীতিগুলির কঠোর প্রয়োগ, তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়, বিপণন এবং তামাক ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলি তুলে ধরে জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযান জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে অত্যস্ত জরুরী।
গবেষনায় প্রদত্ত সুপারিশগুলির মধ্যে রয়েছে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কার্যকরী প্রয়োগ বাড়ানো। অধূমপানের ক্ষতি ও আইনের বিধান সম্পর্কে শিক্ষাদান আরও জোরদার করা, দৃশ্যমান স্থানে সাইনেজ স্থাপনসহ গণপরিবহন ও টার্মিনাল এলাকায় ধূমপানমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতাগুলি মোকাবেলা করা এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য এনফোর্সমেন্ট মেকানিজমকে শক্তিশালী করা, তাদের নজরদারির পরিমান বৃদ্ধি এবং বিধি অনুযায়ী জরিমানা নিশ্চিত করা, ধূমপানমুক্ত কর্মপরিবেশ এবং পরিবহন ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার জন্য সুস্পস্ট দাপ্তরিক নির্দেশনা নিশ্চিত করা এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন নিশ্চিতে এনফোর্সমেন্ট এর পাশাপাশি পরিবহন কর্তৃপক্ষের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।