Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 3:33 am

ন্যায্যতার ভিত্তিতে গ্যাস বিতরণ নিশ্চিত হোক

আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। এ জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল। আবার উচ্চ দামে এলএনজি আমদানির কারণে ভর্তুকি বাড়ছে। এর ভর্তুকি কমাতে গ্যাসের দাম বাড়াতে হচ্ছে বারবার। তাই গ্যাসের নিয়ন্ত্রণে এলএনজির নির্ভরতা কমানো উচিত। এর পরিবর্তে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহে জোর দেয়া উচিত।

রোববার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘জ্বালানি সরবরাহে গ্যাস-এলএনজি বিতর্ক: বিদ্যুৎ খাতে এলএনজি আমদানির ব্যয়জনিত প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এমন মন্তব্য করেন বক্তারা।

গ্যাসের দাম কীভাবে সহনীয় রাখা যায়, সে লক্ষ্যে বিতরণ ও সরবরাহ প্রতিষ্ঠানকে ভাবতে হবে। গ্রাহক অসন্তোষ যেন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করবে সরকার। মনে রাখতে হবে, গ্রাহকদের ভোগান্তি হলে, অসন্তোষ বাড়বেই।

সাধারণ গ্রাহকদের ভোগান্তি কমতে যথাসম্ভব কম সময়ে বিদ্যুৎ বিতরণ পদ্ধতি অটোমেশনে নিতে হবে। অটোমেশনে যাওয়ার সুবিধা হলো সেক্ষেত্রে চুরি, অপচয় কমবে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে কয়েকটি বিষয় সম্পর্কিত। যেমন: গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য, তেলের মূল্য, প্রিপেইড মিটার, গ্যাস পাইপলাইনও গ্যাস পাইপের লিকেজ, গ্যাসের অপচয়, বকেয়া বিল, বিতরণ সংস্থার দুর্নীতি প্রভৃতি। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে গ্যাসের অপচয় কমাতে ঐক্যবদ্ধ  প্রয়াস অব্যাহত রাখাতে হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে সর্বোচ্চ কিংবা সর্বনিন্ম দাম ধরে দেশীয় বাজারে এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হলে ভোক্তা অথবা ব্যবসায়ীর এক পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই সরকারকে দুদিকেই এটি প্রভাব বিবেচনায় নিতে হবে।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে ন্যায্যতার ভিত্তিতে গ্যাস বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। ১০০ ইউনিট খরচ করলে যে ব্যয়, ১০০০ ইউনিট ব্যবহার করলে একই ব্যয়, এটি ন্যায্যতার কথা হলো না। সব সংযোগে প্রিপেইড মিটারের ব্যবস্থা করা গেলে গ্রাহকদের সবার গ্যাস কেনা বাবদ খরচ শুধু সমান হবে না। এতে গ্যাসের অপচয়ও কমবে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত বিবেচনায় গ্রাহকদের মধ্যে শ্রেণিবিন্যাস করা যেতে পারে।

সিপিডি বলেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনেই দেয়া হয়েছে ৪২৫ দশমিক ৭০ বিসিএফ (বিলিয়ন ঘনফুট)। এ ছাড়া শিল্প খাতে ১৮১ দশমিক ৭৫ বিসিএফ, ক্যাপটিভে ১৬৯, আবাসিকে ১৩৪ দশমিক ১৭, সারে ৬৪ দশমিক ৬৫, সিএনজিতে ৩৫, বাণিজ্যিকে ছয় ও চা-বাগানে এক বিসিএফ গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

রান্না ছাড়াও গ্যাস ব্যবহার হয় যানবাহন, শিল্প-কারখানার বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে। শুধু রান্নার কাজে গ্যাস ব্যবহার করেন সাধারণ গ্রাহক। অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও অস্বচ্ছতা দূর করা গেলে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ও বাড়বে। ন্যায্যতার ভিত্তিতে গ্যাস বিতরণ নিশ্চিত করা গেলে সব ধরনের গ্রাহকই সুফল ভোগ করবেন।