একটি ক্যাম্পাস উজ্জীবিত থাকে সেই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের দ্বারা। শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত রাখে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো। বিশেষ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত সংগঠনগুলো বেশি উজ্জীবিত রাখে শিক্ষার্থীদের। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকস শিক্ষার্থীদের ঝোঁক থাকে সাংবাদিকতার দিকে। ক্যাম্পাস হিরোদের কাতারে তাদের নামগুলো স্থান পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী, কর্মচারীসহ সবার কাছে রয়েছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার গ্রহণযোগ্যতা।
সেই ক্যাম্পাস হিরোদেরই এক করতে পেরেছিল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব। গত ২৭ ও ২৮ জুলাই তারা আয়োজন করে ন্যাশনাল জার্নালিজম ফেস্ট-২০১৮। এ আয়োজনে সারা দেশের ২২টি ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সংগঠন একটি প্ল্যাটফর্মে এসেছিল। দুদিনের টানা শিডিউলে সবার মধ্যে ছিল উচ্ছ্বাস ও আনন্দ। প্রতিটি মুহূর্ত ছিল একেকটি নতুন অভিজ্ঞতা।
ক্যাম্পাস জার্নালিজম ফেস্ট-২০১৮ বাংলাদেশের ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করল। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের মেলবন্ধনের সুযোগ তৈরি হয়েছে, তেমনি পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের একটি চমৎকার ক্ষেত্রও সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের উৎসবের ধারাবাহিকতা দেশের ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার পাশাপাশি জাতীয় সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ নয়ন।
ফেস্টে যেমন ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সঙ্গে মহামিলনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল তখন, তেমনই দেশের খ্যাতনামা কয়েকজন সাংবাদিকের সংস্পর্শ পেয়েছিলেন ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা। প্রতিটি মুহূর্ত যেন বাঁধাই করে রাখার মতো। অতিথিদের সঙ্গে কথোপকথনের সুযোগ পেয়েছিলেন ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা। ফটোসেশন তো ছিলই। তাইতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি বাইজিদ ইমন তার অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ক্যাম্পাসের একাডেমিক পড়াশোনা, সাংবাদিকতা নিয়ে ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাইরে বেড়ানো সম্ভব হয় না। কিন্তু যখন শুনলাম শাবি প্রেস ক্লাব সব ক্যাম্পাস সাংবাদিককে এক করতে যাচ্ছে, তখন আর লোভ সামলাতে পারলাম না। ফেস্টের দুদিনের শিক্ষা আমাদের কাজের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।
ফেস্টের দুদিনের সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবারÑসবকিছুর মধ্যেই একটি অন্যরকম আমেজ ছিল সবার মাঝে। একাডেমিক পরাশোনা আর নিউজের চাপে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের বাইরে বেড়ানোর তেমন সময় নেই বললেই চলে। তাছাড়া সবাই এক হবেনÑএমনটাও ছিল প্রায় একটি অসম্ভব বিষয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মো. মতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে যে কয়টি ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের সংগঠন রয়েছে, তাদের একত্র করার যে সাহসী উদ্যোগ নিয়েছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব, তা সত্যিকার অর্থে প্রশংসার দাবি রাখে। বাংলাদেশে এটিই ছিল প্রথম ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের নিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী কর্মশালা। দুদিনব্যাপী এ ফেস্টের বড় সফলতা আমি বলব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ক জোরালো হওয়া ও সবাইকে একটি প্ল্যাটফর্মে একত্র করা।
ফেস্টের সব ক্ষেত্রে ছিল কিছু ভিন্ন আমেজ। প্রশ্নোত্তর পর্বও জমিয়ে তুলছিলেন ক্যাম্পাস হিরোরা। কেউ কেউ মনে করেন, তাদের দুদিনের কাটানো সময়গুলো ছিল জীবনের সেরা সময়গুলোর মধ্যে অন্যতম। সব থেকে বড় পাওয়া ছিল ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের একটি প্ল্যাটফর্মে আনা এবং সেদিনই গঠিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ ক্যাম্পাস জার্নালিস্ট ফেডারেশন’।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিলয় মামুন বলেন, ক্যাম্পাস জার্নালিজম ফেস্ট ছিল ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের জন্য একটি মিলনমেলা। এর মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের আত্মার বন্ধনকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সেই সাহসী উদ্যোগকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিল। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এ প্রোগ্রামের মধ্য দিয়েই গঠিত হয়েছে ক্যাম্পাস জার্নালিস্ট ফেডারেশন। এ ঐক্যই পারবে প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্যকে আলোর মুখ দেখাতে। প্রত্যাশা থাকবে, ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের ঐক্য কখনও বিনষ্ট হবে না।
গণবিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুন্নি আক্তার বলেন, ন্যাশনাল জার্নালিজম ফেস্টের সময়গুলো উৎসাহ-উদ্দীপনায় কেটেছে। অন্য ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়, দুদিনব্যাপী বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজের প্রতি অপার ভালোবাসা ও সাহস পেয়েছি। সৃজনশীল, বস্তুনিষ্ঠতা, সাহসিকতার অপর নাম ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। তাই ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় মেয়েদের উপস্থিতি এগিয়ে যাওয়ার প্রতি অনুপ্রাণিত করবে বলে বিশ্বাস।
সবকিছু মিলিয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, এ ফেস্ট আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি ও পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ করা। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা কঠিন সময় পার করছেন। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। আর এ তাগিদ থেকে ফেস্টে ‘বাংলাদেশ ক্যাম্পাস জার্নালিস্টস ফেডারেশন’ গঠনের মাধ্যমে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের মধ্যে সম্পর্কের নতুন একটি দিগন্তের সূচনা হলো। আশা করব ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের মধ্যে এ সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে অব্যাহত থাকবে।
মো. জাহিদুল ইসলাম