নিজস্ব প্রতিবেদক: ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক ঋণ নিয়মাচার ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ঋণ অনুমোদন করা, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ, পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংকের শেয়ার একই পরিবারে কেন্দ্রীভূত করাসহ কয়েকটি কারণে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গতকাল বৃহস্পতিবার পৃথক দুই আদেশে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চিঠিতে বলা হয়েছে, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও জনস্বার্থে ন্যাশনাল ব্যাংকের বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক আদেশে জানিয়েছে, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক ‘ঋণনিয়মাচার ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ঋণ অনুমোদন প্রদান করা, পর্ষদ কর্তৃক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় অনাকাক্সিক্ষত হস্তক্ষেপ করা, পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংকের শেয়ার একই পরিবারে কেন্দ্রীভূত করা, পরিচালক নির্বাচন বা পুনর্নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি, পর্ষদের গোচরে পরিচালকগণ কর্তৃক আর্থিক অনিয়ম সংঘটন, পর্ষদের নীতিনির্ধারণী দুর্বলতার কারণে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি, ব্যাংকিং সুশাসন ও শৃঙ্খলা বিঘ্ন করার মাধ্যমে ব্যাংক-কোম্পানি ও আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে পর্ষদ কর্তৃক সম্পৃক্ত থাকার ঘটনা ঘটেছে।’
ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের এসব কর্মকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ‘ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১’-এর ৪৭(১) ও ৪৮(১) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষা ও জনস্বার্থে ন্যাশনাল ব্যাংকের বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশে বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকটির পর্ষদের দায়িত্ব ছিল আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা। কিন্তু তারা সেটি না করতে পারায় আগের পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ গঠন করে দেয়া হয়েছে।
আরেক আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুনভাবে পরিচালনা পর্ষদ গঠনের লক্ষ্যে সাতজনকে পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নবগঠিত সাত সদস্যের পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হয়েছেন তিনজন; আর পরিচালক হয়েছেন সাতজন।
স্বতন্ত্র পরিচালকরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন। তাদের মধ্যে পর্ষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন আইবিএর সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার। মেঘনা ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগের শর্তে তাকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নতুন চার পরিচালক হলেন পারভীন হক সিকদার, উদ্যোক্তা পরিচালক খলিলুর রহমান, সিকদার ইনস্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক মো. সফিকুর রহমান ও উদ্যোক্তা শেয়ারধারী হিসেবে পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন।
ন্যাশনাল ব্যাংকে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিরোধ সম্প্রতি আদালতে গড়ায়। ভার্চুয়াল এজিএমে পাতানো ভোটের মাধ্যমে তাকে পর্ষদ থেকে বাদ দেয়া হতে পারে এমন শঙ্কায় পারভীন হক সিকদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আদালত। গতকাল ওই এজিএম হওয়ার কথা ছিল।
ন্যাশনাল ব্যাংকের দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার মারা যান ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। ন্যাশনাল ব্যাংকে সিকদার পরিবারের শেয়ার রয়েছে ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, একক পরিবার, ব্যক্তি বা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারে। নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত শেয়ার তিন মাসের মধ্যে বিক্রির নির্দেশনা দিয়ে গত ১৩ জুলাই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তা না করায় আইনের ১৪ক(৫) ধরায় সরকারের অনুকূলে কেন বাজেয়াপ্ত করা হবে না, তা ১৪ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়ে গত ২১ নভেম্বর চিঠি দেয়া হয়।