ন্যাশনাল ব্যাংকে পে অর্ডার জালিয়াতির চেষ্টা

নজরুল ইসলাম: প্রথমে ৫৫০ টাকার পে অর্ডার তৈরি করা হয়। তারপর টাকার পরিমাণ পরিবর্তন করে চার কোটি ৯৬ লাখ টাকা বসিয়ে নগদায়নের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ধরা পড়ে যায় জালিয়াতকারীরা। পে অর্ডারের আবেদন ও জমাকারীও ছিল ভুয়া। এই ঘটনায় ন্যাশনাল ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাসহ পাঁচজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জনতা ব্যাংকের ঢাকার দিলকুশা লোকাল অফিস শাখা থেকে ৫৫০ টাকার পে অর্ডার (পিওবি-১৪০১০৪৪) ইস্যু করা হয়। জালিয়াতির মাধ্যমে ৫৫০ টাকার জায়গায় চার কোটি ৯৬ লাখ টাকা করা হয়। বেনিফিশিয়ারি এসএস ট্রেডিংয়ের জায়গায় মঞ্জুরুল হক মুঞ্জু দিয়ে নগদায়নের জন্য পরের দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল ব্যাংক ময়মনসিংহ শাখায় জমা দিয়ে উত্তোলনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু টাকা উত্তোলন করতে পারেনি। এ ঘটনার সঙ্গে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার মঞ্জুরুল হক মুঞ্জু, ন্যাশনাল ব্যাংক ময়মনসিংহ শাখার সাবেক এভিপি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার নাজমুল হক চৌধুরী, একই উপজেলার মাঈন উদ্দীন, ন্যাশনাল ব্যাংক ময়মনসিংহ শাখার এসপিও ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রুহুল আমিন এবং শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার হাবিবুর রহমানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

কমিশনের অনুমোদনের পর দুদকের উপপরিচালক ফারুক আহমেদ আদালতে চার্জশিটটি দাখিল করেছেন।  

তদন্তকালে ৫৫০ টাকার পে অর্ডার ইস্যু আবেদনকারী মুজিবুর রহমান, প্রতারক রিপন হাওলাদার ও হাজী রফিককে চিহ্নিত করা যায়নি। পে অর্ডারটির আবেদন ও জমাকারী মজিবুর রহমানকে ঢাকার ফকিরাপুলের ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তদন্তকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মতিঝিলের ফকিরাপুলের মজিবুর রহমান এসএস ট্রেডিংয়ের নামে জনতা ব্যাংকের দিলকুশা লোকাল অফিস শাখায় ৫৫০ টাকার পে অর্ডার করার জন্য আবেদন করেন। ক্যাশ বিভাগের কর্মকর্তা পুুতুল রানী দে এবং অফিসার ইনচার্জ আব্দুল গনি মিয়া জমা দেয়ার সিøপ সই করে পে অর্ডার ইস্যুকারী কর্মকর্তার কাছে উপস্থাপন করেন। এসএস ট্রেডিংয়ের নামে পে অর্ডার ইস্যুকারী কর্মকর্তা মনজুর হোসাইন ও রকিবুল ইসলাম ৫৫০ টাকার পে অর্ডার (পিওবি-১৪০১০৪৪) ইস্যু করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল ব্যাংকের এভিপি নাজমুল হকের চাচাতো ভাই প্রতারক মঈন উদ্দিন, হাবিবুর রহমান, রিপন হাওলাদার ও হাজী রফিক পরস্পর যোগসাজশে ৫৫০ টাকার পে অর্ডারটি বিকৃত করে চার কোটি ৯৬ লাখ টাকা বসিয়ে বেনিফিশিয়ারির নাম মঞ্জুরুল হক মুঞ্জু লিপিবদ্ধ করে জাল পে অর্ডার তৈরি করেন। পরে সেটি নগদায়নের জন্য ন্যাশনাল ব্যাংক ময়মনসিংহ শাখার এভিপি নাজমুল হকের সক্রিয় অংশগ্রহণে কমিশনের লোভ দিয়ে মঞ্জুরুল হক মুঞ্জুর কাছে জমা দেন। এসপিও রুহুল আমিন গ্রাহক মঞ্জুরুল হক মুঞ্জুর অর্থের উৎস যাচাই না করে টিপি বৃদ্ধি করেছেন। এভিপি নাজমুল হক ও এসপিও রুহুল আমিনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সিøপে মঞ্জুরুল হক মুঞ্জু নিজে লিখে ও স্বাক্ষর করে চলতি হিসাব নম্বরে (৩৩০২৭৮৭৭) পে অর্ডারের টাকা সংগ্রহের জন্য এভিপি নাজমুল হকের কাছে জমা দেন। নাজুমল হক রিসিভিং কর্মকর্তা হিসেবে ওই জমার সিøপে স্বাক্ষর এবং পে অর্ডার ও জমার সিøপ ব্যাচ সংগ্রহের জন্য এফইও এফতাদুল হক রহমানের কাছে জমা দেন। তদন্তকালে তিনি জানান, পে অর্ডারটি জমার পর তিনি ব্যাচে তার পোস্টিং দেন। ন্যাশনাল ব্যাংকের ক্লিয়ারিং থেকে পে অর্ডারটি ফেরত আসে। পে অর্ডারটির টাকার পরিমাণ ও গ্রাহকের নামের মিল না থাকায় নগদায়ন করা  যায়নি। অর্থাৎ ন্যাশনাল ব্যাংকের ময়মনসিংহ শাখা থেকে পে অর্ডারটি জনতা ব্যাংকের দিলকুশা লোকাল অফিসে নগদায়নের জন্য পাঠানো হলে জালিয়াতি ধরা পড়ে। তাই টাকা পরিশোধ করা হয়নি।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাজমুল হক চৌধুরী ন্যাশনাল ব্যাংকের ফেনী শাখায় কর্মরত থাকাকালেও অর্থ জমা করা ছাড়াই জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮২টি পে অর্ডার ইস্যু করেন, যার মূল্য প্রায় এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এই জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা হিসেবে ২০১১ সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর তার পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধি বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে তাকে ময়মনসিংহ শাখায় বদলি করা হয়। ময়মনসিংহ শাখায় ইনচার্জ অব ব্যাচ হিসেবে কর্মরত থাকাবস্থায় আবার পে অর্ডার জালিয়াতির প্রচেষ্টায় জড়িত থাকায় ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ তাকে বরখাস্ত করা হয়।

জানতে চাইলে ন্যাশনাল ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার এহতেশাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের ওই দুই কর্মকর্তা এখন আমাদের সঙ্গে নেই। তাদের কর্তৃপক্ষ বরখাস্ত করেছে।’

দুদকের চার্জশিটের বিষয়ে জানতে চাইলে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মেহমুদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০