সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের ইস্পাত ব্যবসায়ী তসকির আহমদের মালিকানাধীন জিকে গ্রুপ ন্যাশনাল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার ঋণগ্রহীতা। ব্যবসার প্রয়োজনে এ গ্রুপের দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ সুবিধা নেওয়া হয়, কিন্তু তারা নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়। ফলে তা খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। এতে সুদ ও আসল মিলে গত ৩১ মার্চ শেষে মোট অনাদায়ের পরিমাণ ৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। আর এ পাওনা আদায়ে ব্যাংকের কাছে থাকা ১২৬ ডেসিমল বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে বিক্রির বিজ্ঞপ্তি জারি করে ন্যাশনাল ব্যাংক।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের ইস্পাত ব্যবসায়ী তসকির আহমদের মালিকাধীন জিকে গ্রুপ ন্যাশনাল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার ঋণগ্রহীতা। ব্যবসার প্রয়োজনে এ গ্রুপের দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ সুবিধা নেওয়া হয়, কিন্তু নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়। ফলে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। এতে সুদ ও আসল মিলে গত ৩১ মার্চ শেষে মোট অনাদায়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিকে স্টিল লিমিটেডের কাছে সুদাসলসহ মোট পাওনা হয় ৪০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ও জিকেএসএস পাইপ লিমিটেডের ৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আর এ পাওনা আদায় নিয়ে চিন্তিত ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড।
বিপুল পরিমাণে পাওনা আদায়ে ন্যাশনাল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা এরই মধ্যে বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে বিক্রির বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এ গ্রুপটির ঋণের বিপরীতে বন্ধকীতে আছে ১২৮ দশমিক ৩২ ডেসিমেল জায়গা। এর মধ্যে রয়েছে চান্দগাঁও এলাকায় সব ভূমি এবং মুরাদপুর এলাকায় শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ ফ্ল্যাট, যা ৩০ জুলাই ন্যাশনাল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় প্রকাশ্য নিলামে বিক্রির দিন ধার্য করা হয়।
গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরের চান্দগাঁও এলাকার মৌলভী পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা তসকির আহমদের মালিকানাধীন জিকে গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যে জিকে স্টিল লিমিটেড, জিকেএসএস পাইপ লিমিটেড, জিকে ট্রেডিং, এবি স্টিল, খাজা গাউসিয়া ট্রেডিং এবং তৌসিফ ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে জিকে গ্রুপ গড়ে ওঠে। একসময় ট্রেডিং ব্যবসা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তসকির আহমদ। বাজার সম্ভাবনা দেখে বিনিয়োগ করেন স্টিলজাতীয় পণ্য উৎপাদন। কিন্তু কাক্সিক্ষত সাফল্য না পেয়ে লোকসানে সম্মুখীন হতে হয়।
চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি তিন হাজার ৬৪১ কোটি ৫১ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে চট্টগ্রামে ন্যাশনাল ব্যাংকের বিতরণ করা সাত হাজার ২১১ কোটি টাকার মধ্যে তিন হাজার ৬৪১ কোটি ৫১ লাখ টাকাই খেলাপি। সে হিসাবে বন্দরনগরীতে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৫০ দশমিক ৪৯ শতাংশই চলে গেছে ঋণখেলাপিদের পকেটে। এর মধ্যে অবলোপনকৃত ঋণ রয়েছে ৮১৪ কোটি ২১ লাখ টাকা, আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে এক হাজার ৯৮৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার ঋণ ও শ্রেণীকৃত ঋণ রয়েছে ৮৪৪ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে জিকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তসকির আহমদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া তার অফিসে যোগাযোগ করা হলে তিনি অফিসে নেই বলে জানানো হয়। ফলে তার মন্তব্য পাওনা যায়নি।
ন্যাশনাল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক ও এসইভিপি নিজাম উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ঋণের পাওনা দিতে না পারায় খেলাপি গ্রুপে পরিণত হয়। আর এ পাওনার বিপরীতে ভূমি সম্পত্তি বন্ধকীতে রয়েছে, যা নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ নিয়ে আর বিস্তারিত বলা যাবে না।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক খেলাপি ঋণবিষয়ক টাস্কফোর্সের বৈঠকে উপস্থাপিত তথ্যমতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪২ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকাকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করেছে টাস্কফোর্স। সে হিসাবে চট্টগ্রামে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ১৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ খেলাপি।

Print Date & Time : 27 June 2025 Friday 12:03 pm
ন্যাশনাল ব্যাংকে ৫০ কোটি টাকা খেলাপি জিকে গ্রুপ
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: