সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের একসময়কার রপ্তানিমুখী জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড এখন দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা নেয়ার পরও খেলাপি তালিকায় নাম ওঠে। সাম্প্রতিক সময়ে খেলাপি হয় ব্যাংক এশিয়ায়। এরপর ন্যাশনাল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় বড় ধরনের ঋণখেলাপি হলো। ওয়েস্টার্ন মেরিনের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৯৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা আদায়ে বন্ধকিতে থাকা সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগে নেয়া হচ্ছে।
ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডে আগ্রাবাদ শাখা সূত্রে জানা যায়, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ২০০০ সাল থেকে দেশে ও বিদেশে কার ফেরি, যাত্রীবাহী জাহাজ, মাছ ধরার বোট, বার্জ, মাছ ধরার ট্রলার, টাগ বোট ইত্যাদি তৈরিতে দক্ষতা দেখায়। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ন্যাশনাল ব্যাংক ঋণ সুবিধা দেয়। ২০১৭ সালের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। এরপর কভিডকালে ব্যবসা স্থবির হয়ে যায়। ফলে প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হয়। যদিও সরকার ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দেয়। কিন্তু ওয়েস্টার্ন মেরিন সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওয়েস্টার্ন মেরিনের কাছে খেলাপি পাওনার পরিামণ ৮৯৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর এ পাওনার বিপরীতে বন্ধকি হিসাবে শিপইয়ার্ডের স্থাপনাসহ হেড অফিসের মোট এক হাজার ৭৪৪ শতক জমি আছে, যা পাওনা আদায়ে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি আগ্রাবাদ অফিসে নিলাম করা হবে। এতে আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিলামে অংশ নিয়ে এসব সম্পত্তি কিনতে পারবে।
ব্যাংক এশিয়া সূত্রে জানা যায়, এ ব্যাংকে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের খেলাপি ৫০৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর এ পাওনার চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে গত বছরের শেষ দিকে মামলা করা হয়।
ব্যাংক ও শিল্পসংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্বের জাহাজ নির্মাণকারী দেশগুলো জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুরে বেশি পরিমাণ বৃহৎ আকারের জাহাজ তৈরির কার্যাদেশ রয়েছে। আর মাঝারি আকারে জাহাজ নির্মাণের দেশগুলো তেমন অর্ডার পাচ্ছে না। বিশ্বব্যাপী জাহাজ ক্রেতারা বাংলাদেশের বিকল্প দেশ হিসেবে অন্যদেশকে কার্যাদেশ দিচ্ছে। ফলে জাহাজ নির্মাণশিল্পের মন্দাভাবের কারণে এই শিল্পে আশানুরূপ উন্নতি সাধিত হচ্ছে না। এতে এ খাতে আর্থিক সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ওয়েস্টার্ন মেরিনে ঋণ নিয়ে খুবই উদ্বেগে আছি। তাদের গত পাঁচ বছর তেমন ব্যবসা হয়নি। এ নিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হলেও পাওনা পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ তারা পাওনার কিছু অংশ পরিশোধ করবে বলে কথা দিয়েছেন। কিন্তু প্রতি বারই ব্যর্থ হয়। আর এসব পাওনা আদায়ে ব্যাংক আইনের আশ্রয় নেবে।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল হাসান বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংক নিলাম নোটিশ দিয়েছে ঠিক। কেন এসব হচ্ছে, তা তো ফোনে বলা যাবে না। আপনি সরাসরি অফিসে দেখা করেন। সামনে বসে বিস্তারিত আলাপ করব।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় সংসদে প্রকাশিত শীর্ষ ২০ খেলাপি তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। আর এক হাজার ৫২৯ কোটি টাকা খেলাপি।