ন্যূনতম কর দুই হাজার টাকার বিধান থাকছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক: করযোগ্য আয় নেই। কিন্তু রিটার্ন দাখিলের সময় দুই হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এই প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। তবে বাজেট ঘোষণার পর থেকে এই নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সরকার বলছে, নাগরিকদের সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই এই ন্যূনতম করারোপ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আয় না থাকলে কর নেয়া অন্যায়। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের সাধারণ মানুষ এমনিতেই চাপে রয়েছে। আয়কর নিয়ে ভীতি রয়েছে। এর মধ্যে ন্যূনতম কর দুই হাজার টাকা নেয়া হলে মানুষ রিটার্ন দাখিলে নিরুৎসাহিত হতে পারে। তারা আরও বলছেন, যারা করযোগ্য অথচ কর দেয় না, তাদের করনেটের আওতায় আনা উচিত। ৪৪টি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর নিতে হলে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। রিটার্ন দাখিলের সময়ই এ কর দিতে হবে। তবে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া ন্যূনতম করের বিধান বাতিল হতে পারে। আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এনবিআরের কর্মকর্তাদের বৈঠকের কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেলে বিধানটি বাতিল হতে পারে বলে এনবিআরের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

১ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের  জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। এ ধরনের অংশীদারিত্বমূলক অংশগ্রহণ দেশের সক্ষম জনসাধারণের মাঝে সঞ্চারের লক্ষ্যে করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে অথচ সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছেÑ এমন সব করদাতার ন্যূনতম কর দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।’

অন্যদিকে, ন্যূনতম আয়করে পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বাজেট উত্তর সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘কাদের টিআইএন থাকতে হয়, টিআইএন বাধ্যতামূলক কাদের, সেই লিস্টটা যদি সামনে নেন, তাহলে সেখানে দেখবেন টিআইএন বাধ্যতামূলক আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ট্রেড লাইসেন্সধারীর জন্য, কমিশন এজেন্সির জন্য। টিআইএন বাধ্যতামূলক পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য। সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি, গাড়ির জন্য। সাধারণ গরিব মানুষের কোনো অসুবিধা হবে না, সাধারণ গরিব মানুষের তো টিআইএন বাধ্যতামূলক নয়।’

এফবিসিসিআই ন্যূনতম কর বাতিলে এনবিআরকে সুপারিশ করেছে। এনবিআরে পাঠানো সুপারিশে বলা হয়েছে, আয়ের ওপর কর আরোপের মৌলিক ধারণার সঙ্গে ন্যূনতম করের বিষয়টি সাংঘর্ষিক হয়ে পড়েছে। নির্ভরযোগ্য হিসাবের ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মোট আয়ের ওপর কর আরোপের মূলনীতি অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া ছোট করদাতাদের হিসাব রাখার সক্ষমতা নেই। তাই তাদের জন্য অনুমিত আয়ের ভিত্তিতে করের বিধান রাখা উচিত।

আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন অথচ করযোগ্য আয় নেইÑএমন ব্যক্তিদের ওপর ন্যূনতম কর আরোপের প্রস্তাবকে বৈষম্যমূলক বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বাজেট উত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, সরকারি সেবা নিতে গেলে যদি কারও করযোগ্য আয় নাও থাকে, তবু তাকে ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে। যার করযোগ্য আয় নেই, তার ওপরে এটা চাপিয়ে দেয়াটা একটা বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত। এই নিয়ম তুলে দেয়া হোক।

অপরদিকে, প্রস্তাবিত বাজেটে করযোগ্য আয় না থাকলেও ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর প্রদানের বিষয়টি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে রিটায়ার্ড ট্যাক্স অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত বাজেট পরবর্তী সেমিনারে এমন শঙ্কার কথা জানায় সংগঠনটি।

যে ৪৪টি সেবা পেতে রিটার্ন সিøপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তাহলোÑব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে, কোম্পানি পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হলে, আমদানি-রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি-ইআরসি) নিতে, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে, সমবায় সমিতি নিবন্ধন নিতে, বিমা কোম্পানির সার্ভেয়ার হতে, ১০ লাখ টাকার বেশি ক্রেডিটসম্পন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে ও সচল রাখতে, ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের জমি-ফ্ল্যাটের দলিল করতে, ক্রেডিট কার্ড নিতে, পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ নিতে, ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স ও ছাড়পত্র পেতে, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে সন্তান ভর্তি করতে, কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নিতে, অস্ত্রের লাইসেন্স নিতে, ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে, ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে, নির্বাচনে অংশ নিতে, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ১৬ হাজার টাকা হলে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ১৬ হাজার টাকার বেশি বেতন গ্রহণ করলে, পণ্য আমদানি-রপ্তানির বিল অব এন্ট্রি জমা দেয়া, দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধন পেতে, জমি, ভবন বা অ্যাপার্টমেন্ট লিজ রেজিস্ট্রেশনকালে, দেশের সব এলাকায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের দলিল রেজিস্ট্রিকালে, ট্রাস্ট, ফান্ড, এনজিও, ফাউন্ডেশন, ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা, সমবায় সমিতির ব্যাংক হিসাব খুলতে ও সচল রাখতে, বাড়ি ভাড়া নেয়ার সময় বাড়ির মালিকের এবং পণ্য ও সেবা গ্রহণের সময় সরবরাহকারীর রিটার্ন জমার সিøপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০