ন্যূনতম মুনাফা না দিলে বাজার স্থিতিশীল হবে না

পুঁজিবাজারে বর্তমানে বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে ২৫ থেকে ৩০ লাখ। দেশের জনস্যাংখা ১৮ কোটি কিন্তু সেভাবে তাদের বাজারে সম্পৃক্ত করা যাচ্ছে না। গত ১০ বছরে যে পরিমাণ বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছিল, এখন আর বাড়ছে না। গত ১০ বছরে দেশের জিডিপির গ্রোথ অনেক বেড়েছে। আসলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। যদি বিনিয়োগ করে কোনো লাভ করতে না পারে, তাহলে কেন তারা বাজারে আসবে। বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম মুনাফা দিতে না পারলে বাজার স্থিতিশীল অবস্থানে আসবে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
শফিকুল আলম বলেন, এডিবির মতে, এশিয়ার মধ্যে টপ অর্থনীতির গ্রোথের দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি আইএমএফ বলেছে বাংলাদেশ অর্থনীতির গ্রোথ সাত দশমিক ছয় শতাংশ, যা ভারতের অর্থনীতির গ্রোথের চেয়ে বেশি। ভারতের অর্থনীতির গ্রোথ সাত দশমিক দুই শতাংশ। কিন্তু এ গ্রোথের প্রতিফলন পুঁজিবাজারে দেখা যাচ্ছে না বরং তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। বাজারের যখন কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়, তখন বাজারসংশ্লিষ্টদের সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু উদ্যোগ নিতে দেখা যায়। বাজারের মূল সমস্যাগুলো কোথায়? অর্থাৎ নতুন করে কী কোনো নিয়মনীতি প্রণয়ন করতে হবে, নাকি বর্তমান নিয়মনীতিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে, না বাজার পরিচালনায় কোনো ঘাটতি রয়েছে বা বাজারের এ অবস্থা কেন বিরাজ করছে এটি কেউ ভালোভাবে দেখছে না। আসলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা দায়সারা আচারণ করছে অর্থাৎ বাজারের বর্তমান অবস্থা তো ভালোই আছে। আবার অনেক ব্রোকারেজ হাউজের মালিক একই সুরে সুর মিলাচ্ছেন, বাজার তো ভালোই আছে। সত্যিকার অর্থে বাজার ভালো অবস্থানে নেই। ভারতের অর্থনীতি নি¤œগতিতে তারপরও সে দেশের পুঁজিবাজারে তেজিভাব দেখা যাচ্ছে, কিন্তু দেশের অর্থনীতি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে; কিন্তু পুঁজিবাজার সেভাবে এগোচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালে ধসের পর বাজারকে স্থির অবস্থানে আনার জন্য অনেক কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু যেসব কোম্পানি আনা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই ভালো পারফরম্যান্স করতে পারছে না বরং আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। অর্থাৎ কোম্পানিগুলো বাজারকে স্থির অবস্থানে না এনে খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি হচ্ছে না। আসলে এ পর্যন্ত বাজারসংশ্লিষ্ট অনেক নিয়মনীতি করা হয়েছে। এখানে মূল সমস্যা হচ্ছে সমন্বিত উদ্যোগ।
সালাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এ পর্যন্ত বাজারের জন্য কম পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু বাজার ভালো হচ্ছে না। এমনকি ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেও লাভের দেখা মিলছে না। অন্যদিকে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে তারল্য সংকট দেখা যাচ্ছে। যদি মানি মার্কেট স্থিতিশীল রাখা না যায় সেক্ষেত্রে পুঁজিবাজারও ভালো হবে না। কারণ মানি মার্কেট ও পুঁজিবাজার এ দুটি মিলেই ফান্ড ফ্লো সৃষ্টি হয়। এখান থেকে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হবে এবং অর্থনীতির গ্রোথ হবে। পুঁজিবাজারে বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে ২৫ থেকে ৩০ লাখ। দেশের জনস্যাংখা ১৮ কোটি কিন্তু সেভাবে তাদের বাজারে সম্পৃক্ত করা যাচ্ছে না। এটা তো আরও বাড়ার কথা ছিল। গত ১০ বছরে যে পরিমাণ বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছিল এখন সেভাবে বাড়ছে না। কারণ গত ১০ বছরে দেশের জিডিপি গ্রোথ অনেক বেড়েছে। আসলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। যদি বিনিয়োগ করে কোনো লাভ করতে না পারে তাহলে কেন বাজারে আসবে। বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম মুনাফা দিতে না পারলে বাজার স্থিতিশীল অবস্থানে আসবে না। যদি বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তা দেওয়া যায় যে, এখানে বিনিয়োগ করলে ন্যূনতম একটি মুনাফা লাভ করা যাবে, তাহলে বাজার গতি ফিরে পাবে। গতি ফিরে পেলেই বাজার কাক্সিক্ষত অবস্থানে যাবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০